সবজি ফল–মূল নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন একজন বিক্রেতা। আজ দুপুরে খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজারে
সবজি ফল–মূল নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন একজন বিক্রেতা। আজ দুপুরে খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজারে

পানছড়িতে ইউপিডিএফের বাজার বয়কট, আসছেন না পাহাড়ি ক্রেতারা’

চার নেতা-কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে ইউপিডিএফের বাজার বয়কটের কারণে পাঁচ দিন ধরে পানছড়ি বাজারে আসছেন না পাহাড়ি ক্রেতা-বিক্রেতারা। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। মাসব্যাপী কর্মসূচির কারণে গত রোববার সাপ্তাহিক হাটবারেও বাজারটি ছিল ক্রেতাশূন্য। এ কারণে কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল সোমবার পানছড়ি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ৭০ থেকে ৮০ জন বাঙালি ও দু-একজন পাহাড়ি ছাড়া বাজারে লোকজন নেই বললেই চলে। বাজারের দোকানপাট খোলা থাকলেও বেচাকেনা না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বেশির ভাগ কৃষক তাঁদের উৎপাদিত সবজি ও শস্য বাজারে আনতে পারছেন না। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন তাঁরা।

বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, পানছড়ি বাজারে পাশের উপজেলা মাটিরাঙ্গা ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার লোকজনও কেনাকাটা করতে আসেন। প্রতি রোববার পানছড়ি বাজারে বসে সাপ্তাহিক হাট। হাটে লাখ লাখ টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচ দিন পাহাড়িরা বাজারে না আসায় বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। ক্রেতা কমে যাওয়ায় বাঙালি অনেক ব্যবসায়ীও খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাজারে আসছেন না। সারা দিনে ১০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে না অনেক দোকানির। অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে পারছেন না সময়মতো।

পানছড়ি বাজার এলাকার কৃষক মোহাম্মদ করিম বলেন, এক একর জায়গা বর্গা নিয়ে তিনি শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, করলা লাগিয়েছেন। এসব সবজি কোথায় বিক্রি করবেন, এ চিন্তায় আছেন তিনি। তাঁর সবজির মূল ক্রেতা পাহাড়িরা। তা ছাড়া পাহাড়িরা বাজারে না আসায় ব্যাপারীও আসছেন না পানছড়ি বাজারে।

পানছড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি উত্তম দেব বলেন, বাজার বয়কট করায় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে ছোট অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। বেচাকেনা বন্ধ হওয়ায় তাঁরা ঋণ শোধ করতে পারছেন না। এর আগেও পানছড়ি বাজারে দীর্ঘ ১১ মাস পাহাড়িরা বাজারে আসেননি।

সবজি ফল–মূল নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন বিক্রেতারা। আজ দুপুরে খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজারে

পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আজম বলেন, বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ রয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের ঝামেলা হয়নি। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

সদ্য যোগদান করা পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশ বলেন, ‘বিষয়টি শোনার পর বাজার পরিদর্শনে গিয়ে তেমন কোনো পাহাড়ি ক্রেতাকে বাজারে দেখতে পাইনি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উপজেলার জনপ্রতিনিধি, কারবারিদের নিয়ে একটি আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক করেছি।’

এর আগে ২০১৮ সালের ২০ মে থেকে ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ মাস পানছড়ি বাজার বন্ধ ছিল। সে সময় পানছড়ি বাজারের শুকতারা নামের এক আবাসিক হোটেলে জেএসএস (এম এন লারমা) থাকেন, এমন অভিযোগে পাহাড়িদের পানছড়ি বাজারে আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে। তবে সে সময় ইউপিডিএফ এ অভিযোগ অস্বীকার করে।

ক্রেতাশূন্য পানছড়ি বাজার। আজ দুপুরে তোলা

১১ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে পানছড়ি উপজেলার দুর্গম লোগাং ইউনিয়নের অনিলপাড়ায় ইউপিডিএফের চার নেতা-কর্মী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। নিহত নেতা–কর্মীরা হলেন ইউপিডিএফ–সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সহসভাপতি লিটন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফের সদস্য রুহিন বিকাশ ত্রিপুরা।

এ ঘটনায় বিপুল চাকমার চাচা নিরুপম চাকমা বাদী হয়ে ১৩ ডিসেম্বর পানছড়ি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।