শত শত মানুষের আবেদন পর্যালোচনা করার মতো জনবল ও সক্ষমতা রয়েছে কি না, সেটিও প্রশ্ন।
২৪ জুন, ২০২৩। ঢাকা থেকে অসুস্থ মাকে চিকিৎসা করিয়ে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ফিরছিলেন কমলা পারভীন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের (ঢাকা-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে) ভাঙার মালিগ্রাম এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কমলাসহ তাঁর পরিবারের সাত সদস্য।
মহাসড়কের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে কমলাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটিতে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান কমলা, তাঁর দুই
ছেলে, এক মেয়ে, মা, বোন ও বোনের ছেলে। অ্যাম্বুলেন্সটির চালকও পরে মারা যান।
কমলা পারভীনের স্বামী মো. আলমগীর দুর্ঘটনার পর স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়ের পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন। শাশুড়ি, শ্যালিকা ও তাঁর সন্তানের জন্য আলাদা আবেদন করা হয়েছে। সরকার তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তার যে বিধান যুক্ত করেছিল, তার আওতায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হচ্ছে। এর জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধে৵ এককালীন সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে।
বাংলাদেশে যা করা হয়েছে, তা একেবারে নতুন। ফলে দরকার হলো মানুষকে বেশি করে জানানো, তহবিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে দক্ষতা বৃদ্ধি করা।সামছুল হক, অধ্যাপক, বুয়েট
দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তাঁর পরিবার পাঁচ লাখ টাকা এবং আহত ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের উদ্যোগটি ভালো। তবে কিছু আশঙ্কা রয়েছে।
প্রথমত, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো যথেষ্ট টাকার সংস্থান নেই। ক্ষতিপূরণের জন্য প্রয়োজন হতে পারে বছরে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা। জোগাড় হতে পারে ১৫০ কোটি টাকা। সরকারের কাছে এবারের বাজেটে (২০২৩-২৪) এককালীন ১০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। সরকার দেয়নি। দ্বিতীয়ত, দরিদ্র মানুষের পক্ষে আবেদন করে তার পেছনে লেগে থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া কঠিন হতে পারে। তৃতীয়ত, শত শত মানুষের আবেদন পর্যালোচনা করার মতো জনবল ও সক্ষমতা রয়েছে কি না, সেটিও প্রশ্ন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সারা বিশ্বে বিমাব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে যা করা হয়েছে, তা একেবারে নতুন। ফলে দরকার হলো মানুষকে বেশি করে জানানো, তহবিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে দক্ষতা বৃদ্ধি করা। নতুবা পরিবহনশ্রমিক, সমাজে প্রভাব রয়েছে—এমন লোকেরাই সুবিধা পাবেন। সাধারণ মানুষ এর বাইরে থেকে যেতে পারেন।
দেশে যে পরিমাণ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হন, তাঁদের সবাইকে সহায়তা দেওয়ার মতো তহবিল নেই। কারণ, আইনে যে যে খাত থেকে অর্থ আসার কথা ছিল, তা পাওয়া যায়নি। এমনকি সরকারও কোনো টাকা দেয়নি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগ কোনো রকমে চালু হচ্ছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সড়ক পরিবহন আইন করে। এতে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে বিধিমালা করতে সরকার চার বছর পার করে দেয়।
বিধিমালা অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি পাবেন তিন লাখ টাকা। আহত কারও চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে তিন লাখ টাকা। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে পাবেন এক লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে বিধিমালা জারি হয় গত ২৭ ডিসেম্বর। এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে ৩১০টি। এর মধ্যে ৬৩টি আবেদনের অনুসন্ধানপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। নিহত ৩৮ জনের পরিবার ও আহত ২৫ জন ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য বলে প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে।
সরকার এখন যে প্রক্রিয়ায় তহবিল গঠন করছে, তাতে বছরে দেড় শ কোটি টাকার মতো সংগ্রহ যেতে পারে।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকেই আগামী ২২ অক্টোবরে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বাকি যাঁরা থাকবেন, তাঁদের পরে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আগস্ট পর্যন্ত আবেদন পড়েছিল ১৭৯টি। তবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ সূত্র বলছে, এখনো দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সবাই আবেদন করছেন না। তাঁদের সচেতন করার সরকারি উদ্যোগও খুব একটি নেই।
সড়কে পরিবারের সাত সদস্য হারানো মো. আলমগীর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি অন্যের কাছ থেকে জেনেছেন; কিন্তু আবেদন করার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না। এরপরও পরিচিত ব্যক্তিদের সহায়তায় আবেদন করেছেন।
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়দায়িত্ব নিরূপণ করা হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিকভাবে এককালীন সুবিধা পাবেন।নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন
দেশে যে পরিমাণ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হন, তাঁদের সবাইকে সহায়তা দেওয়ার মতো তহবিল নেই। কারণ, আইনে যে যে খাত থেকে অর্থ আসার কথা ছিল, তা পাওয়া যায়নি। এমনকি সরকারও কোনো টাকা দেয়নি। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগ কোনো রকমে চালু হচ্ছে।
বিআরটিএর হিসাব বলছে, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৮ জন। আহত ৪ হাজার ৬৪৮ জন। এই হিসাবে বছরে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে লাগবে ২৩২ কোটি টাকা। আহত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দিলে ব্যয় হবে প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে ট্রাস্টের খরচ। সব মিলিয়ে বছরে ৪০০ কোটি টাকার বেশি লাগবে।
বেসরকারি হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, ২০২২ সালে সড়কে মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৭১৩ জনের। আহত হয়েছেন সাড়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষ। বেসরকারি হিসাব আমলে নিলে বছরে ক্ষতিপূরণের জন্য প্রয়োজন হতে পারে ৮০০ কোটি টাকার মতো।
বেপরোয়া ও লাইসেন্সবিহীন চালক এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে যদি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, দায় যদি নিরূপণ না করা হয়, তাহলে দুর্ঘটনা বেড়ে যায় কি না, সেই আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
সরকার এখন যে প্রক্রিয়ায় তহবিল গঠন করছে, তাতে বছরে দেড় শ কোটি টাকার মতো সংগ্রহ যেতে পারে।
সড়ক পরিবহন আইনে ক্ষতিপূরণের জন্য গঠিত তহবিলের টাকা কোন কোন খাত থেকে আসবে, তার বিস্তারিত বলা হয়েছে। খাতগুলো হলো সরকারের দেওয়া অনুদান, মোটরযানের মালিকের কাছ থেকে তোলা চাঁদা, সড়ক পরিবহন আইনের মাধ্যমে আদায় করা জরিমানার অর্থ, মালিক সমিতি থেকে দেওয়া অনুদান, শ্রমিক সংগঠন বা শ্রমিক ফেডারেশন থেকে দেওয়া অনুদান, অন্য কোনো বৈধ উৎস থেকে পাওয়া অর্থ।
বিআরটিএ সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত শুধু যানবাহনের মালিকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই খাত থেকে তহবিলে জমা হয়েছে ৯৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
সরকার চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গঠিত তহবিলে কোনো টাকা বরাদ্দ দেয়নি। যদিও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি টাকা এককালীন চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল।
সড়ক পরিবহন আইনে জরিমানা আদায় করে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। সড়ক আইন মেনে এই টাকা পেতে গত ২০ মার্চ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ক্ষতিপূরণের তহবিল পরিচালনাকারী ট্রাস্টি বোর্ড; কিন্তু এখনো এই খাতের কোনো টাকা জমা হয়নি।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, সংস্থাটির ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। রাস্তায় পুলিশের মামলা ও জেলা পরিষদের ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযানে যে জরিমানা হয়, এর হিসাব বিআরটিএতে নেই।
পরিবহন মালিক সমিতিগুলো প্রতিটি বাস-ট্রাক থেকে দৈনিক চাঁদা তোলে। শ্রমিক সংগঠনও চাঁদা নেয়। এই দুটি সংগঠনের প্রতিনিধি ট্রাস্টি বোর্ডেও আছে; কিন্তু তহবিলে কোনো টাকা জমা দেয়নি তারা।
সড়ক পরিবহন বিধিমালা অনুসারে, ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠনে মোটরসাইকেলের মালিককে এককালীন এক হাজার টাকা, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভারের মালিকদের বার্ষিক দেড় হাজার টাকা এবং মিনিবাস, মিনি ট্রাক ও পিকআপের মালিকদের ওপর ৭৫০ টাকা ধার্য করা আছে।
কার, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি) ও মাইক্রোবাসের জন্য ৫০০ টাকা দিতে হয়। আর তিন চাকার যানের বার্ষিক চাঁদা ৩০০ টাকা। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে টাকা না দিলে প্রতি মাস বা মাসের অংশবিশেষের জন্য ৫০ টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
ট্রাস্টি বোর্ড ও বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, তহবিল আস্তে আস্তে বড় হবে। সরকারের কাছে টাকা চেয়েছি। আবার সড়ক আইনে মামলার ফলে যে জরিমানা আদায় হয়, সেটিও পাওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর সারা দেশে এর প্রচার বাড়বে। তখন সবাই ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে উৎসাহী হবে।’
দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের দাবি মীমাংসার জন্য রয়েছে ১২ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড। বিআরটিএর চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকেরা বোর্ডের সদস্য। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকেও সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা।
ট্রাস্টি বোর্ড তহবিলের একটা অংশ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে। বোর্ডের জনবল নিয়োগের ক্ষমতা আছে। ৩৪ জনের জনবল কাঠামোর একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তা এখনো অনুমোদিত হয়নি।
সড়ক আইন অনুসারে, আর্থিক সহায়তা পেতে নির্ধারিত ফরমে দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। ফলে যেসব দুর্ঘটনায় ৩০ দিন পেরিয়ে গেছে, সেগুলোতে আর আবেদনের সুযোগ নেই। আবেদন দাখিলের দিন থেকে ১০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন। এই কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন জমা দেবে।
প্রতিবেদন দাখিলের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাস্টি বোর্ড আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবে ‘প্রাপকের হিসাবে প্রদেয়’ চেকের মাধ্যমে টাকা দেবে। অর্থাৎ দুর্ঘটনার দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব।
দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তদন্ত করে সুপারিশের জন্য ১৪ সদস্যের কমিটি আছে। ঢাকার বাইরে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট সহকারী পরিচালক হবেন সদস্যসচিব। পুলিশ, পরিবহনমালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরা সদস্য হিসেবে থাকবেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি মনে করেন, নির্ধারণ করা ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত নয়, তাহলে আপিল করার সুযোগ আছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বা আবেদন পাওয়ার পর ট্রাস্টি বোর্ড চিকিৎসাসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় মেটাতে অগ্রিম টাকা দিতে পারবে।
প্রশ্ন হলো, বেপরোয়া চালানোর কারণে কোনো যানবাহনের চালক যদি দুর্ঘটনায় পড়ে আহত হন, তিনিও কি ক্ষতিপূরণ পাবেন, যেসব যানবাহনের চালকের লাইসেন্স নেই, ফিটনেস নেই, সেসব যানবাহনের চালক ও শ্রমিকেরা কি ক্ষতিপূরণ পাবেন, আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারিত হবে কোন বিবেচনায়?
নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়দায়িত্ব নিরূপণ করা হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিকভাবে এককালীন সুবিধা পাবেন।
বেপরোয়া ও লাইসেন্সবিহীন চালক এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে যদি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, দায় যদি নিরূপণ না করা হয়, তাহলে দুর্ঘটনা বেড়ে যায় কি না, সেই আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।