জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে শিশু-কিশোর সমাবেশে শিশু–কিশোরদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার টুঙ্গিপাড়ায়
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে শিশু-কিশোর সমাবেশে শিশু–কিশোরদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার টুঙ্গিপাড়ায়

শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার আহ্বান

শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, তা নিশ্চিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া খুবই দরকার, কিন্তু এই লেখাপড়ার নামে তাদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করবেন না। আমরা এখন চাচ্ছি, খেলাধুলা ও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই তারা তাদের লেখাপড়া শিখবে। যাতে তার ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা ও মেধা বিকাশের সুযোগ হয়।’

রোববার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি শিশুকাল থেকেই সততা ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা, জাতীয় দিবসগুলো সম্পর্কে শিক্ষাদান এবং রাস্তায় চলার নিয়মকানুন তথা ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার জন্যও অভিভাবক-শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধ প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের শিশুদের কাছে এটাই আমার অনুরোধ, গুরুজনদের মানতে হবে, শিক্ষককে মানতে হবে, বাবা-মায়ের কথা শুনে চলতে হবে, বাবা–মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, তাহলে কেউ বিপথে যাবে না।’

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক-অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির থেকে দূরে থাকার জন্য ছোটবেলা থেকেই সততার শিক্ষা দিতে হবে। সেই সঙ্গে গান-বাজনা ও লেখাপড়া, ছবি আঁকা থেকে শুরু করে ধর্মীয় শিক্ষাসহ সব ধরনের কারিকুলামের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘অভিভাবক ও শিক্ষক আপনাদের কাছেও আমার এই অনুরোধ থাকবে, ছোটবেলা থেকেই তাদের ভেতরে যেন মানবিক গুণগুলো গড়ে উঠতে পারে সেদিকে যেমন দেখবেন, তেমনি এই শিশুদের ভেতরে যে সুপ্ত প্রতিভা ও মেধা রয়েছে, সেই সুপ্ত প্রতিভা এবং মেধা ও মনন বিকাশের সুযোগ যেন তারা পেতে পারে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন তো শিশুরা বিশ্বকে চোখের সামনে দেখতে পায়। কাজেই ক্লাসে শুধু বই পড়া নয়, চোখে দেখেও যেন তারা শিখতে পারে। আর আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের “স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক”। আর সেটাই আমাদের সরকারের কাম্য।’ তিনি বলেন, ‘আমি চাই, আমাদের দেশের প্রতিটি শিশু যাতে সুন্দর, নিরাপদ এবং উন্নত জীবন পায়, সেটাই আমার সরকারের কাম্য।’

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক স্বাগত বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়, যার নেতৃত্ব দেবে আজকের শিশুরা। সেভাবে আমরা তাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। একই সঙ্গে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা—এগুলোর দিকেও মনোনিবেশ করতে হবে।’

ফিলিস্তিনের গাজায় শিশু ও নারীদের ইসরায়েলি বাহিনী হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করায় তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দ্বিমুখী নীতির কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ সব সময় নির্যাতিতদের পাশে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পাশের দেশ মিয়ানমারের সংঘাত চলাকালে বাস্তুচ্যুত নারী-শিশুসহ ১০ লাখের অধিক মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গের উল্লেখ করেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাষ্ট্রপতি প্রথমে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তাঁরা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।

এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

মো. সাহাবুদ্দিন ও শেখ হাসিনা ফাতেহা পাঠ করেন এবং বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের অন্যান্য শহীদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাতে যোগ দেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল সাতটায় প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। প্রধানমন্ত্রী পরে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে একটি স্মারক ডাকটিকিট, একটি প্রথম দিনের কভার এবং একটি ডেটা কার্ড প্রকাশ করেন।

১৯২০ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার বর্তমানে জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।