দেশে চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো দিন দিন কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এমনকি অনেকাংশেই অকার্যকর হয়ে পড়া অ্যান্টিবায়োটিকের তালিকায় রয়েছে শক্তিশালী বহু অ্যান্টিবায়োটিকও। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে এক বছর সময়কালে পরীক্ষিত ২৫ হাজার ৫৬২টি নমুনার ফলাফল থেকে এমন আশঙ্কাজনক তথ্য উঠে আসে।
শনিবার এক বৈজ্ঞানিক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। জীবাণুগুলোর এভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার পেছনে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারই দায়ী। বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সভায় এসব তথ্য উপস্থাপন করেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবা চৌধুরী।
অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ার এ চিত্র অবশ্য একেবারে নতুন নয়। বিগত বছরগুলোতেও এমন চিত্র দেখা গিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সাজ্জাদ বিন শহীদ বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকারিতার এই ঊর্ধ্বমুখী হারের কারণে জটিল ধরনের সংক্রমণের রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। শক্তিশালী, দামি অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসা করানো ছাড়া উপায় থাকছে না। আবার এসব অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও ভুগছেন অনেকে। আর যেসব জীবাণুর সংক্রমণ কোনো শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকেও সারছে না, সেসব মারাত্মক জীবাণুর সংক্রমণে বহু রোগী মারাও যাচ্ছেন।
২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের রোগীদের যেসব নমুনা মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পাঠানো হয়েছে, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পাওয়া উপাত্ত উপস্থাপন করা হয় এ সভায়। বলা হয়, জীবাণুগুলোর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের পর দেখা গেছে, প্রায়ই হাসপাতালের রোগীদের যেসব জীবাণু দিয়ে সংক্রমণ হয়, সেগুলোর মধ্যে প্রধান চারটি জীবাণুর ক্ষেত্রে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্সের হার ৯১-৯৮ শতাংশ। মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্সের অর্থই হলো, অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিকই জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম।
সভায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা তাঁদের পেশাগত অভিজ্ঞতার আলোকে জানান, এ দেশে এখনো বহু মানুষ ওষুধের দোকানদারের অবৈজ্ঞানিক পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। অনেকে জানেনও না যে সেই ওষুধ একটি অ্যান্টিবায়োটিক। অথচ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। আবার চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন শুরু করার পর সেটির ডোজ সম্পন্ন করাও আবশ্যক। এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে সবারই।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুল আলম, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফারুক আহাম্মদ প্রমুখ।
সভা সঞ্চালনা করেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাকলী হালদার। আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। বৈজ্ঞানিক সভার আয়োজন ছাড়াও এদিন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে র্যালি, পোস্টার প্রেজেন্টেশন ও লিফলেট বিতরণ করা হয়।