সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী যুবদলের সহ আইনবিষয়ক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী যুবদলের সহ আইনবিষয়ক সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী

হরতালে পুলিশের কাজে বাধার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর কারাদণ্ড

যুবদলের আইনবিষয়ক সহসম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নূরে আলম সিদ্দিকীসহ দলের ৯ জন নেতা-কর্মীকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম)।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ২০১০ সালের ২৭ জুন বিএনপির হরতালে সূত্রাপুরের কাপ্তানবাজার এলাকায় জোর করে দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছিলেন। পুলিশ নিষেধ করলে তাঁরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে তিন পুলিশ সদস্যকে আহত করেন।

ঘটনার পর কাজে বাধা দেওয়া ও আক্রমণের অভিযোগে পুলিশ মামলা করে। সেই মামলায় ১৩ বছর পর বুধবার রায় দিয়েছেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দা। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন নূরে আলম সিদ্দিকীর আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম।

দুই বছর কারাদণ্ডের সাজা পাওয়া যুবদলের আইনবিষয়ক সহসম্পাদক নূরে আলম সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুসের সহকর্মী। রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, আইনজীবী নূরে আলম সিদ্দিকীকে গত ২৭ অক্টোবর মালিবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

দণ্ডিত অপর আটজন যুব ও শ্রমিক দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। তাঁদের নাম লিটন, এ কে হক সবুজ মিয়া, নজরুল ইসলাম, মোস্তাক আহমেদ, জাকির ব্যাপারী, মো. কালাম, সেলিম ও আবদুর রহিম ভূঁইয়া।

এজাহারে যে অভিযোগ

মামলার এজাহারে ঘটনাটি উল্লেখ করেছে পুলিশ। এতে বলা হয়, সেদিন সূত্রাপুর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন মোল্লা জানতে পারেন, সূত্রাপুরের কাপ্তান বাজারে যুবদল নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীসহ ৮০ থেকে ৯০ জন জোর করে দোকানপাট বন্ধ ও রাস্তায় যানবাহন আটকে দিচ্ছেন।

খবর পেয়ে মনির হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। তখন নূরে আলমসহ অন্যরা পুলিশের কাজে বাধা দেন বলে উল্লেখ করা হয় এজাহারে।

এতে আরও বলা হয়, বিষয়টি মনির হোসেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। তখন আরও পুলিশ পাঠানো হয়। তারা কাপ্তানবাজারে এলে নূরে আলমসহ অন্যরা পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আহত হন পুলিশ কনস্টেবল বশির আহমেদ, মিজানুর রহমান ও রফিক।

পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় নূরে আলমসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে ২০১১ সালের ১৫ মে যুবদল নেতা নূরে আলমসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দণ্ডবিধির ৩৫৩, ৩৩২, ১৮৬ ও ৩৪ ধারার অপরাধ করেছেন।

আইনজীবী ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মামলাটিতে ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এই মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত সাক্ষী ছিলেন ১২ জন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার বাদীসহ (পুলিশ) তিনজন পুলিশ সদস্যকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির করে। আদালত তাঁদের সাক্ষ্য নেন।

নূরে আলম সিদ্দিকীর আইনজীবী ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নূরে আলমসহ অন্যরা ন্যায়বিচার পাননি। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।

দেড় মাসে ১৭৮ জনের সাজা

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। দলের তাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এখন বিপুল মামলা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই কারাগারে। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে পুরোনো মামলায় দলের নেতা-কর্মীদের সাজা হচ্ছে।

বিগত দেড় মাসে ঢাকার আদালতগুলোয় অন্তত ১৪টি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৭৮ জন নেতা-কর্মীর সাজা হলো। এক বছরের হিসাবে ঢাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ২০টি মামলায় সাজা হওয়ার খবর জানা গেছে। এসব মামলায় ২১২ জন নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলায় অল্প সময়ের ব্যবধানে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে রায় দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।