‘কিশোর আলো’র ৯ বছর

যত দূর স্বপ্ন, তত দূরে যাওয়া

দেশের বিভিন্ন স্কুলে নিয়মিত কর্মশালা আয়োজন করে কিশোর আলো
  ফাইল ছবি

আমার পড়তে শেখাটা পত্রিকা দিয়ে। বানান করে আধো আধো বুলিতে প্রথম আলো পড়েই পড়তে শিখেছি। বুঝতেই পারছেন, জন্মের পর থেকেই সকাল সকাল প্রথম আলো দেখে বড় হচ্ছি।

২০১৩ সালে আমার বয়স মাত্র ১১, পড়ি চতুর্থ শ্রেণিতে। ঢাকায় জন্ম ও লম্বা একটা সময় থাকলেও তখন থাকি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। সেপ্টেম্বরে প্রথম আলোর পাতায় দেখি, কার্টুনসহ একটি বিজ্ঞাপন। বড় করে লেখা, ‘ধরো তুমিই সম্পাদক’। ভেতরে আরও অনেক লেখা, সঙ্গে একটা ফরম। পুরোটা পড়ে বুঝলাম, কিশোরদের জন্য প্রকাশিত হবে নতুন মাসিক পত্রিকা কিশোর আলো। আদরের নাম ‘কিআ’। নতুন এই পত্রিকায় কী কী থাকা উচিত, ফরম পূরণ করে সেটা জানাতে পারব আমিও। খচখচ করে কেটে ফরমটা আলাদা করে ফেললাম পত্রিকা থেকে। পূরণ করে পাঠিয়ে দিলাম কিআর ঠিকানায়। একে তো নতুন কিশোর পত্রিকার খবর, আবার সেই পত্রিকা সম্পাদনায় থাকবে আমার মতামত! ঢাকার বাইরে থেকে সব মিলিয়ে ভীষণ উত্তেজনা হচ্ছিল।

কিআর প্রথম সংখ্যা প্রকাশ পায় ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর। সেবার ঈদের ছুটিতে বাবা আর কিআ এসেছিল একসঙ্গে। পাতাভর্তি গল্প, উপন্যাস আর কমিকসসহ এত এত আয়োজন দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। গিলতে লাগলাম একের পর এক লেখা। পরিচয় হলো এক নতুন পৃথিবীর সঙ্গে।

২০১৬ সালে কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি উৎসব হয়েছিল সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া আমি উৎসবে অংশ নিতে একাই চলে এসেছিলাম ঢাকায়। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলাম সে বছর। ম্যাগাজিনের বাইরেও যে কিআর পৃথিবীটা অনেক বড়, তা টের পেয়েছিলাম সেবারই।

পরের বছরই পাকাপাকিভাবে ফিরলাম ঢাকায়। নিয়মিত আসতে শুরু করলাম কিআর মাসিক সভায়। নতুন বন্ধু, নতুন অভিজ্ঞতা—সবই হতে লাগল একে একে। ঢাকার নতুন স্কুলের বন্ধুর তুলনায় কিআর বন্ধুবান্ধবই বেশি হলো। নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেলাম নানা অনুষ্ঠানে। পাশাপাশি একটু একটু করে লিখতে গিয়ে একদিন নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখতে পেলাম কিআর পাতায়। এই আনন্দ লিখে প্রকাশ করা কঠিন। কিআর প্রচ্ছদের মডেল হওয়ারও সুযোগ হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। কয়েক বছর আগেও এসব ছিল আমার কাছে স্বপ্নের মতো।

কিশোর আলো প্রকাশের পর কেটেছে ৯ বছর। আজ কিশোর আলোর জন্মদিন। কিআর সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছি আমিও। আর কয়েক দিন পর পার করব কলেজের গণ্ডি। একসঙ্গে বড় হতে গিয়ে এই ৯ বছরে কিআ নিয়ে হয়েছে আরও অনেক অনেক অভিজ্ঞতা। দুই মলাটের ম্যাগাজিনের ভেতরের পাতাগুলো আমার কাছে বিশাল এক জগৎ।

কিশোর আলোর জন্মদিনের জন্য অক্টোবর মাসটা সব সময় আমার জন্য বিশেষ। সারা বছর এই মাসের জন্য চলত অপেক্ষা। ১ অক্টোবর জন্মদিন উদ্‌যাপনসহ মাসজুড়ে ঢাকাসহ দেশের তিনটি জেলায় বর্ষপূর্তি উৎসবের অপেক্ষা। করোনা এসে বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। গত দুই বছর স্থগিত ছিল উৎসব, উদ্‌যাপন।

৯ বছর পূর্তিতে আবার নানা আয়োজন শুরু হচ্ছে। আজ ঢাকার কিশোর আলো কার্যালয়ে আমন্ত্রিত অতিথি, স্বেচ্ছাসেবক ও পাঠকদের নিয়ে কেক কেটে উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন। অন্যদিকে সকালবেলা কিআ সম্পাদক আনিসুল হক পৌঁছে যাবেন ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে। সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের আট ফুটবলারসহ কলসিন্দুর গ্রামের ৪৫ জন নারী ফুটবলারের সঙ্গে তিনি উদ্‌যাপন করবেন কিশোর আলোর নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এ বছর ফিরছে বর্ষপূর্তি উৎসবও। অক্টোবর মাসেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। তারিখ, সময় ও অংশ নেওয়ার নিয়ম জানা যাবে কিআর ওয়েবসাইট (www.kishoralo.com) ও ফেসবুক পেজে (www.fb.com/kishor.alo)।

শুরুতেই বলছিলাম, ঢাকার বাইরে থেকে জরিপ ফরম পূরণ করে পাঠিয়ে ছোট্ট আমি কতটা উত্তেজিত ছিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি এখন প্রদায়ক হিসেবে কাজ করছি। সুযোগ পাচ্ছি কিআর নানা বিষয়ে মতামত দেওয়ার। নিয়মিত লিখছি কিশোর আলোসহ প্রথম আলোর নানা পাতায়। সামলাচ্ছি আরও নানা দায়িত্ব। এই সবকিছুই আমার কাছে স্বপ্নপূরণের মতো ব্যাপার। আমার স্বপ্ন যত দূর, কিআর সঙ্গে আমিও এগিয়ে যেতে চাই তত দূরেই।

স্বপ্ন দেখতে শেখানোর জন্য এবং স্বপ্নপূরণের জন্য একটা ধন্যবাদ তো কিআ পেতেই পারে! ধন্যবাদ, কিশোর আলো!