চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ

সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণে তাঁরা হারালেন দৃষ্টিশক্তি

ভাইয়ের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছছেন মো. আজাদের বড় ভাই আকতার হোসেন। লুকিয়ে কাঁদছেন আকতারের স্ত্রীও। একটু পর আজাদকে নিয়ে যাওয়া হবে অস্ত্রোপচার কক্ষে। চোখে অস্ত্রোপচার হবে। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন এক চোখে আর দেখবেন না। বাঁ চোখের অবস্থাও খারাপ।

এই খবরে তাঁরা কাঁদছেন। মো. আজাদ (২৫) কয়েক বছর ধরে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে কাজ করছেন। শনিবারের দুর্ঘটনায় তাঁর মুখমণ্ডল থেঁতলে গেছে। কোনোরকমে প্রাণ নিয়ে বের হয়ে এসেছেন আজাদ। সারা মুখ ও মাথায় কাচ ও লোহার টুকরা ঢুকেছে। আঘাত লেগেছে দুই চোখেও। অবস্থা খুবই খারাপ।

বড় ভাই আকাতর হোসেন বলেন, একটি চোখে নাকি আর দেখবে না আমার ভাই। অন্য চোখটিও খারাপ। এখন কীভাবে তাঁকে বলব?

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন আজাদ। আজাদ বিছানায় শুয়ে আছেন। দুই চোখ বন্ধ। মুখজুড়ে মরা রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। থুতনিতে ব্যান্ডেজ। রোববার দুপুরে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।

চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তনুজা তানজিন রোববার সকালে তাঁর কক্ষে বসে বলেন, আজাদসহ তিনজনের একটি করে চোখ খুব বাজেভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। দুজনের অস্ত্রোপচার চলছে। আরও একজনের হবে।

নাহিন শাহরিয়ারের বাঁ চোখে ইতিমধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তিনিও সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের কর্মী। চোখে কাচ ঢুকে নার্ভ কেটে গেছে। অস্ত্রোপচার করে অনেক কাচ বের করা হয় বলে জানান চিকিৎসকেরা।

ট্রাকের শ্রমিক মো. সোলায়মানের দুই চোখেই আঘাত লেগেছে। কাচ ও লোহার টুকরা ঢুকেছে। তাঁরও একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি থাকবে না বলে জানান চিকিৎসকেরা।

অধ্যাপক তনুজা তানজিন বলেন, সবার চোখেই অনেকগুলো কাচের টুকরা। পাশাপাশি লোহার পাত। এতে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুপুর ১২টার দিকে আজাদকে অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাই আকতার হোসেন ও ভাবি তখনো কেঁদে চলছেন। আজাদের চোখে তীব্র ব্যথা। তাঁকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে চলেছেন দুজন, অস্ত্রোপচার করলে ভালো হয়ে যাবি।