বাংলাদেশের অভ্যুত্থান নিয়ে ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গে ভারতীয় দুটি সংবাদমাধ্যমের কথা তুলে ধরেছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তাঁর মতে, বাংলাদেশে ইসলামি উগ্রবাদ তৈরি হলে ভারতের যারা উগ্রবাদী রয়েছে, তাদের জন্য সহায়ক হয়। সেই জায়গা থেকে এই অপপ্রচার চালানো হয়ে থাকতে পারে।
আজ রোববার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘দ্য ক্রস বর্ডার স্প্রেড অব মিসইনফরমেশন ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে নিয়ে ভারতের দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আপনারা দেখবেন, আমাদের এই আন্দোলনের অন্যতম একজন মাহফুজ আলমকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। ভারতের পত্রিকা ইকোনমিক টাইমস কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়া তাঁকে হিজবুত তাহরীর সদস্য হিসেবে অভিহিত করে। আমরা দেখলাম, সেই একই সুর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রতিফলিত হয়েছে। একই সুরে কথা বলছেন তসলিমা নাসরিন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশে হিজবুত তাহরীর তৎপরতা নিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের ইকোনমিক টাইমস। মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে হিজবুত তাহরীর প্রতি আনুগত্য থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে তাতে উল্লেখ করা হয়। আবার প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনেও মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে হিজবুত তাহরীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগের উল্লেখ করা হয়।
মাহফুজ আলম অবশ্য হিজবুত তাহরীর বা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত নন বলে আগেই স্পষ্ট করেছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কলঙ্ক লেপনের একটি প্রচারণা চলছে। বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অপপ্রচার সেলগুলো এটা করছে যে আমি ইসলামি বা জঙ্গিবাদী রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম, বিশেষ করে হিজবুত তাহরীর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমি যুক্ত ছিলাম না!’
হিজবুত তাহরীর ও অন্যান্য অগণতান্ত্রিক গোষ্ঠীর আদর্শের বিপক্ষে ছিলেন এবং এখনো আছেন উল্লেখ করে মাহফুজ আলম ওই পোস্টে আরও লেখেন, ‘আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম না। আমি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করি নাই। বিশ্ববিদ্যালয়–জীবনের প্রথম বর্ষে আমার কাছে তারা এসেছে এবং তাদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে তাদের আদর্শগত লক্ষ্যের সঙ্গে আমি একমত ছিলাম না।’
এ বিষয়ে আজকের আলোচনায় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মাহফুজ আলম বৈশ্বিক মঞ্চে দাঁড়ালেন এবং আন্দোলনকে বৈশ্বিকভাবে পরিচিত করালেন, তখন থেকেই এই অপপ্রচার ছড়ানোর বিষয়টি বেশি করে হচ্ছে।
কী উদ্দেশ্যে এসব ছড়ানো হচ্ছে, তা বোঝা দরকার বলে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অভ্যুত্থানকে একধরনের ইসলামি উগ্রবাদের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশে একধরনের উগ্রবাদের উত্থান ঘটছে এবং তাদের হাতেই এই অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। যেটি একেবারেই সত্য নয়; বরং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং করা হচ্ছে। কারণ আমরা জানি, বাংলাদেশে ইসলামি উগ্রবাদ তৈরি হলে ভারতের যারা উগ্রবাদী রয়েছে, তাদের জন্য সহায়তা হয়।’
ভারতের যারা গণতন্ত্রকামী মানুষ রয়েছেন, তাঁরাও এসবের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া গড়তে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের এ ধরনের প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার), মিসইনফরমেশন (ভুল তথ্য) ও ন্যারেটিভের (বয়ান) বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, দাঁড়াতে হবে।’
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। সেমিনারের উদ্বোধনী সেশনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মিসইনফরমেশনের (ভুল তথ্য) আন্তঃসীমান্ত বিস্তার ও অভিযোজন নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রবন্ধ পড়েন ইউল্যাবের অধ্যাপক সুমন রহমান ও গবেষণা সহকারী রাহুল রায়।