সর্বজনীন পেনশন নিয়ে জনগণ যাতে কোনো অপপ্রচারে প্রভাবিত না হয়, সেদিকে নজরদারি রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ নির্দেশ দেন। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সর্বজনীন পেনশন চালু হয়েছে। এটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কিন্তু অনেকেই ঐতিহাসিক এ উদ্যোগের বিপক্ষে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত তথ্য, সরকার কী করেছে, কী করতে যাচ্ছে, কীভাবে মানুষ উপকৃত হবে—এ ব্যাপারগুলো জনগণের কাছে উপস্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। জনগণ যেন জেনেশুনে, বুঝে এখানে অংশগ্রহণ করে, কোনো রকম অপপ্রচারে তারা যেন প্রভাবিত হতে না পারে, সেদিকে সবাইকে নজরদারি রাখতে বলেছেন। সরকারের বিভিন্নজন যেখানে যাঁরা কথা বলবেন, তাঁরা এটি জানাবেন, কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দেবেন, তথ্য মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৭ আগস্ট বহুল প্রত্যাশিত সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিককে পেনশন–সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩’–এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনে আগে যে ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ ছিল, তার ধারা পরিবর্তন বা কয়েকটি জায়গায় সামান্য যুগোপযোগী করা হয়েছে। যেমন আগে ছিল, ৬০ বিঘার বেশি কেউ কৃষিজমির মালিক থাকতে পারবেন না। এখন, বিশেষ ক্ষেত্রে এটি শিথিলযোগ্য হবে। যেমন কোনো সমবায় সমিতির সব সদস্য তাঁদের জমির মালিকানা যদি সমিতির অনুমতি দেয়, সেটি হতে পারে চা, কফি, রবার, অন্য কোনো ফলের বাগানে ব্যবহৃত জমির জন্য, এটি প্রযোজ্য হবে না। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য কোনো ভূমি ব্যবহার করতে চায়, তখন সেটি প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া রপ্তানিমুখী শিল্প, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে যদি প্রয়োজন হয়, তখনো প্রযোজ্য হবে না।
‘ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে। এটি হবে নাটোরে। এ জন্য আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বর্তমানে সারা দেশে ৫৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এখন নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৫–তে। এ ছাড়া বর্তমানে ১১৩টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন), আইন ২০২৩’–এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনে জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন তা আছে ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে সাধারণ আসনে উপনির্বাচন হলে ৯০ দিনের মধ্যে করতে হয়। সংরক্ষিত মহিলা আসনে তা ছিল ৪৫ দিন। সেটি পরিবর্তন করে সাধারণ সংসদ সদস্যের নির্বাচনের মতো ৯০ দিন করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বৈঠকে ‘বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) আইন, ২০২৩’, ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আইন, ২০২৩’, ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন, ২০২৩’, ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’ এবং ‘বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২৩’–এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।