বাংলাদেশে উৎপাদিত শাকসবজি ও ফলমূলে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভারী ধাতু ও কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শাকসবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারী ধাতু পাওয়া গেছে লালশাকে। ফলের মধ্যে লিচুতে পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক। আর জেলাভিত্তিক হিসেবে নারায়ণগঞ্জে উৎপাদিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি ভারী ধাতুযুক্ত শাকসবজি।
ফলমূল ও শাকসবজি নিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় করা পৃথক দুটি গবেষণার ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা দুটি করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
ফলসংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন প্রধান। তাঁর গবেষণায় মূলত ফলে কীটনাশকের অবশেষ কী পরিমাণে আছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। আম, লিচু, বরই ও পেয়ারার প্রতিটির ৮০টি করে মোট ৩২০টি নমুনার ওপর গবেষণা চালানো হয়। ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণায় ফলের ৩৯টি নমুনায় কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়। সংখ্যাটি মোট নমুনার প্রায় ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে লিচুতে (১৮ দশমিক ৮ শতাংশ নমুনায়)। কীটনাশক সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে আমে (৮ দশমিক ৮ শতাংশ নমুনায়)।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন প্রক্রিয়াকে নিয়মিত তদারকি করা, উত্তম কৃষিচর্চার ওপর জোর দেওয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে গবেষক দল।
শাকসবজিতে হেভি মেটাল বা ভারী ধাতুর উপস্থিতি ও এর মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। গবেষণায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ছয়টি জেলা থেকে ৯ ধরনের শাকসবজি সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো হলো আলু, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, টমেটো, লালশাক, পটোল, বাঁধাকপি, শসা ও মটরশুঁটি।
গবেষণায় দেখা গেছে, এসব শাকসবজিতে লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামসহ বেশ কয়েকটি ভারী ধাতুর উচ্চ উপস্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর মাত্রায় ভারী ধাতু রয়েছে লালশাকে। ক্যাডমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা প্রতি কেজিতে ১৯০ মাইক্রোগ্রাম। সেখানে প্রতি কেজি লালশাকে এই ধাতু পাওয়া গেছে ৭০৪ দশমিক ৩২ মাইক্রোগ্রাম। এ ছাড়া প্রতি কেজি বেগুনে ২৭৫ দশমিক ৬৬ মাইক্রোগ্রাম, ঢ্যাঁড়সে ৩৪৯ মাইক্রোগ্রাম ও টমেটোয় ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শিম, শসা, ঢ্যাঁড়স, পটোল ও লালশাকে ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর লেডের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেগুন, বাঁধাকপি, শিম, শসা, ঢ্যাঁড়স, পটোল, টমেটো ও লালশাকে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, শাকসবজিতে সবচেয়ে বেশি ভারী ধাতু পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করা নমুনাগুলোয়। আর শাকসবজিতে শুধু আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে শেরপুরে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, যেসব শাকসবজিতে ভারী ধাতু রয়েছে, সেগুলো দীর্ঘদিন খেলে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মোহাম্মদ মোস্তফা। প্রধান অতিথি ছিলেন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন কর্তৃপক্ষের সদস্য মোহাম্মদ সোয়েব। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালক শামশাদ বেগম কোরাইসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকবাল রউফ।