আরবি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের শাবান মাসের পরই আসে পবিত্র রমজান। রমজানকে বলা হয় রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস।
ধর্মীয়ভাবে এ পবিত্র মাসের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি দেশে দেশে সিয়াম বা রোজাকে ঘিরে নেওয়া হয় হরেক প্রস্তুতি। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটে স্থানীয় ঐতিহ্য বা রেওয়াজের। তাই অঞ্চল, দেশ বা স্থানভেদে রমজানকে স্বাগত জানানো ও রোজার প্রস্তুতিতে চোখে পড়ে ভিন্নতা, বৈচিত্র্য।
কোথাও আলোকসজ্জা করা হয়, কোথাও-বা জোর দেওয়া হয় সাজসজ্জায়। যেমন মিসরে রমজান মাসে এক বিশেষ ধরনের ফানুস ওড়ানো ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনেকে আলোকসজ্জায় গুরুত্ব দেন। এ ছাড়া প্রায় সবখানেই মসজিদ ধোয়ামোছা থেকে শুরু করে রং করা, নতুন করে সাজানো হয় বেশ ঘটা করে।
সারা দিন পানাহারে বিরত থাকার পর ইফতারে যুক্ত হয় নানা ধরনের মুখরোচক পদ, সাহ্রিতেও থাকে বাহারি আয়োজন। কোনো এলাকায় মিষ্টান্নের আধিক্য থাকে তো, অন্যখানে ফলমূল বা ভাজাপোড়া। কোথাও কোথাও রোজার জন্য তৈরি করা হয় বিশেষ বিশেষ পদ, যা বছরের অন্যান্য সময় সাধারণত দেখা যায় না। যেমন পুরান ঢাকায় ইফতারের জন্য এত পদের পসরা সাজানো হয়, যা একধরনের বিস্ময়ই তৈরি করে। সেসব পদের নামের বৈচিত্র্যও উল্লেখ করার মতো, যেমন ‘বাপের বড় পোলায় খায়’।
আবার বছরের অন্য সময় খেজুর সেভাবে না চললেও রোজায় এর চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। কেননা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই ফল দিয়ে ইফতার করতেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তাই এ ব্যাপারে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মনে একধরনের ভাবাবেগ কাজ করে, খেজুর হয়ে ওঠে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ। একইভাবে রোজার মাসে মেসওয়াক করার প্রচলনও বেড়ে যায় বহুলাংশে।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। তবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে পুণ্যময় এ মাস শুরু হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। হিজরি সনের মাস শুরু হয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে, অর্থাৎ চান্দ্রমাসের কারণেই এই ভিন্নতা। তাই দেশে দেশে রমজানের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে ছোট থেকে বড়—সবার মধ্যেই কাজ করে প্রবল ঔৎসুক্য। এ জন্য শাবানের শেষে সন্ধ্যার আকাশে চোখ রেখে ক্ষীণ বাঁকা চাঁদ দেখার বিষয়টি উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়, তৈরি করে খুশির আবহ।
আগে খালি চোখে চাঁদ দেখা হলেও এখন প্রযুক্তির সহায়তাও নেওয়া হয়। আকাশ মেঘলা থাকলে অনেক সময় দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ।
কেননা, আগুন যেমন ধাতুকে নিখাদ করে, রোজাও তেমন ইমানদার খাঁটি বান্দায় পরিণত করে। তাই মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মুসল্লিরা রমজানজুড়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। নিষ্ঠার সঙ্গে রোজা রাখেন।
রমজানের শেষে আসে ঈদ। ঈদ মানে খুশি। অর্থাৎ রমজানের শুরু হয় খুশির আবহ নিয়ে, ঈদের মধ্য দিয়ে সেই খুশি পূর্ণতা পায়। তাইতো রমজান মাস ঘিরে দেশে দেশে এত আয়োজন, এত উৎসাহ, এত নিবেদন।