কয়লাসংকটে বন্ধ হওয়ার এক মাস পর আজ বুধবার রাতে বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র আবার উৎপাদনে যেতে পারে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম উল্লাহ আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্রুত উৎপাদন শুরু করতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। সব ঠিকঠাক থাকলে আজ রাতে কেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।’
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলে দেশে চলমান লোডশেডিং বন্ধ হবে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই ইউনিটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে। চুক্তির প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। মূলত, ডলার-সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এর জেরে কয়লার অভাব দেখা দেয়।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সূত্র বলছে, ৯ ফেব্রুয়ারি ৩০ হাজার টন কয়লা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে একটি জাহাজ মোংলায় এসে পৌঁছায়। এ ছাড়া ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরেকটি জাহাজ ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দিনে ৫ হাজার টন কয়লা লাগে। সে হিসাবে এখন মাত্র ছয় দিনের কয়লা আছে। এই কয়লা শেষ হওয়ার আগেই পরের জাহাজটি দেশের বন্দরে এসে পৌঁছাবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, দেশে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কম চালানো হচ্ছে। আবার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। এর মধ্যে হঠাৎ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়। এ কারণে এখন প্রতিদিন গড়ে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর আগে পিডিবিকে জানাতে হয়। এরপর বিদ্যুৎ উৎপাদন সূচির সঙ্গে তা সমন্বয় করে পিডিবি।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, আজ রাতে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে। দ্বিতীয় ইউনিট আগামী এপ্রিল মাসে চালুর কথা রয়েছে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হলে দিনে কয়লা লাগবে ১০ হাজার টন। বর্তমানে তাদের ৬ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ দেওয়া আছে। নতুন করে ডাকা দরপত্রে অংশ নিয়ে আরও ৬০ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ পেয়েছে দেশের বেসরকারি খাতের একটি শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ। শুরু থেকে তারাই এই কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করছে। ৬০ লাখ টন কয়লা দিয়ে আগামী তিন বছর রামপাল কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে এসব কয়লা।
প্রথম ইউনিট চালুর পর রামপাল থেকে দিনে অন্তত ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ আসত ঢাকায়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধের আগেই পিডিবিকে ডলার-সংকটের বিষয়টি জানায় রামপাল। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি অবহিত করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়। এরপর ঋণপত্র খোলার ব্যবস্থা করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় নেওয়া হয় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। ২০১২ সালে গঠিত হয় বিআইএফপিসিএল। ২০১৩ সালে পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয় এই কোম্পানির। ২০১৬ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরুর কথা থাকলেও তা হয় ২০১৭ সালে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রটির। কিন্তু বারবার শুধু সময় পিছিয়েছে। সুন্দরবনের কাছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানান পরিবেশবাদীরা।