পররাষ্ট্রসচিবকে মার্কিন কর্মকর্তা

দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র

রিচার্ড নেফিউ
রিচার্ড নেফিউ

দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞাকে একটি পদক্ষেপ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ এমন মন্তব্য করেছেন।

গতকাল বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এ তথ্য জানান। বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে রিচার্ড নেফিউ নাগরিক সমাজের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সকালে মতবিনিময় করেন। এরপর তিনি পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কীভাবে দুর্নীতি দমনে কাজ করছে, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তার বাস্তবায়ন কীভাবে করা হচ্ছে, তা জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সঙ্গে কীভাবে সমন্বয় করে কাজ করা হয়, তা জানানো হয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব জানান, আগামী ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদের ২০ বছরপূর্তিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই সম্মেলন থেকে নতুন করে দুর্নীতি দমনে দেশগুলো থেকে অঙ্গীকার চাইবে যুক্তরাষ্ট্র।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘দুর্নীতি দমনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক একাধিক উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ জড়িত। তাদের বলেছি যে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স আছে, সে ক্ষেত্রে আমরা সব দেশ থেকে সাড়া পাই না। যেমন কিছুদিন আগে আমরা সুইসদের থেকে সহযোগিতা পাইনি। আমরা চাই যে সবাই যেন এই ইস্যুতে সহযোগিতা করে।’

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, অর্থ পাচার দুর্নীতির একটি অংশ, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফেরত আনা অনেক পরের বিষয়। কোন পথে এগুলো গেছে বা এগুলোকে বন্ধ করা…এগুলোর সবই অবৈধ অর্থ না–ও হতে পারে। কিন্তু কীভাবে সেই অর্থ নেওয়া হয়েছে, তা যাচাই–বাছাইয়ের প্রশ্ন রয়েছে।

রিচার্ড নেফিউর সফর ঘিরে ১১ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যে খরব প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কিন্তু রিচার্ড নেফিউ যেহেতু নিজেই নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন, কোনো ব্যক্তিবিশেষের কথা না বলে তিনি বলেছেন যে দুর্নীতি দমনে নিষেধাজ্ঞা একটি পদক্ষেপ। সুনির্দিষ্ট কোনো দেশ বা ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা হয়নি।

নাগরিক সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে রিচার্ড নেফিউ বুঝতে চেয়েছেন কীভাবে এখানে দুর্নীতি দমন ও অর্থ পাচার রোধ কার্যক্রম জোরদার করা যায়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে ও অর্থ পাচার রোধে কী ধরনের আইন রয়েছে। এতে রাষ্ট্র ও সরকার জনগণের কাছে কতটুকু জবাবদিহি করে। নাগরিক সমাজ দুর্নীতি দমনে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামগ্রিক জবাবদিহি কতটুকু কার্যকর।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘মতবিনিময়ের সময় বলেছি বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তবে তা কার্যকর নয়। ঠিক সে রকম দুর্নীতি দমনে আইন রয়েছে, যা বাস্তবায়ন হয় না। সেই সঙ্গে আপামর জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরও দুর্বল। সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক জবাবদিহি না থাকায় দুর্নীতি প্রতিরোধব্যবস্থা দুর্বল। অন্যদিকে ওইসিডির সদস্যদেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতিবিরোধী, কর ফাঁকি রোধ এবং অর্থ হস্তান্তরের বিষয়ে অনেক আইন ও বিধি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে সেগুলোকে আমরা কার্যকর হতে দেখি না। এতে করে আমাদের সন্দেহ হয়, অর্থ পাচারের মধ্য দিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি উপকৃত হচ্ছে।’