দেশে এখন পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, বাক্স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একটি সমাবেশের বক্তারা। তাঁরা বলেছেন, শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে, যা কার্যত ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ’। তাই এই আইন বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান খান ও এ কে এম নাসির উদ্দিনসহ ‘নিপীড়নমূলক আইনে’ গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে।
‘মানবাধিকারকর্মী আদিলুর রহমান, নাসির উদ্দিনসহ নিপীড়নমূলক আইনে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের’ দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই ‘ছাত্র-জনতার সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। ‘নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক নাসির উদ্দিনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে তাঁদের নামে এই মামলা হয়েছিল।
আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনের মামলার রায়ের দিনের কথা উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘সেখানে মধ্যযুগীয় লোহার খাঁচার মধ্যে তাঁদের আটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ডাকাতও না, সন্ত্রাসীও না।’
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সোচ্চার রয়েছে। যাঁর সমালোচনা করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা–সমর্থকেরা। এ বিষয়ে অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, একটি কথা বলা হয়, বিদেশিরা নাক গলাচ্ছে। কিন্তু মানবাধিকার কোনো স্থান, দেশ বা কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মানবাধিকার সর্বজনীন একটি বিষয়।
মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকার সমালোচনা করেন অধ্যাপক সি আর আবরার। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করে এখন অবসরে আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা যখন শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন, তখন শিক্ষকদের যে ভূমিকা আর এখন যে ভূমিকা, এটাতে তিনি চরমভাবে হতাশ। সত্য কথা, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো, নিজেদের তাগিদে সাড়া দেওয়া লোকজনের সংখ্যা গোটা সমাজে কমে যাচ্ছে। সেখানে বুদ্ধিজীবী মহলের মধ্যে সেটি আরও অনেক বেশি কমে যাচ্ছে।
বক্তব্যে মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক বলেন, এ ধরনের বিক্ষোভ এখন প্রতিনিয়ত করতে হবে। দেশকে এমন জায়গায় ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, প্রতিনিয়ত প্রতিটি জায়গায় বিক্ষোভ করতে হবে।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ৫০ বছরের বেশি হয়েছে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এখন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতেও ভয় পেতে হয়।
দেশে ‘উন্নয়নের মুলা ঝুলিয়ে’ লুটপাট চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।
বিকেল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যায় শেষ হওয়া এই সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান, রোজিনা বেগম, মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম, সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী, নাট্যকর্মী নাদিম হাসান, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।