বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে পিভিসি পাইপ ও ফিটিংস উৎপাদন করছে
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে পিভিসি পাইপ ও ফিটিংস উৎপাদন করছে

সঠিক পাইপ-ফিটিংসে থাকুন নিশ্চিন্ত

নব্বইয়ের দশকে গৃহনির্মাণে বাইরে-ভেতরে ব্যবহার হতো কাস্ট আয়রন স্পান (সিআই) এবং গ্যালভানাইজড আয়রন (জিআই) পাইপ। পরে বাংলাদেশের আবাসন খাতের বিস্তৃতিতে বেড়ে যায় বাড়ি নির্মাণে আধুনিক উপকরণের চাহিদা। পাইপ-ফিটিংসের ক্ষেত্রে এর স্থান দখল করে আনপ্লাস্টিকাইজড পলিভেনাইল ক্লোরাইড (ইউপিভিসি) এবং ক্লোরিনাইটেড পলিভেনাইল ক্লোরাইড (সিপিভিসি)। কারণ, বাড়ির বিভিন্ন অংশের টেকসই নির্মাণ ও নিরাপত্তার জন্য সঠিক পাইপ-ফিটিংস ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশে পাইপ-ফিটিংস খাতের অবস্থা

নির্মাণ খাতের দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সব ধরনের পিভিসি পাইপ ও ফিটিংসের চাহিদাও সমানতালে বাড়ছে। বাড়ি, অফিস, শিল্পস্থাপনা থেকে শুরু করে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে পিভিসি ফিটিংস ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মূল কারণ হলো, পিভিসি ফিটিংসের টেকসই গুণাবলি, সহজ স্থাপনব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী মূল্য। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) দেশের সব ধরনের পিভিসি পাইপ ও ফিটিংসের মান নির্ধারণ ও পরীক্ষার কাজ পরিচালনা করে।

পিভিসি ফিটিংসের উৎপাদন ও সরবরাহ

বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে পিভিসি পাইপ ও ফিটিংস উৎপাদন করছে। এদের মধ্যে ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপ অন্যতম। দেশের পিভিসি ফিটিংস খাতসহ সামগ্রিক বিষয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় বিভাগের পরিচালক মো. মাহমুদুল ইসলামের সঙ্গে। সঠিক পিভিসি ফিটিংসয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পিভিসি ফিটিংস ব্যবহার করে বাড়ি নির্মাণ এখন সর্বাধিক জনপ্রিয়। এটি শুধু টেকসই নয়, বরং সাশ্রয়ীও। পানি বা গ্যাসলাইন স্থাপনের সময় সঠিক মানের পিভিসি পাইপ এবং ফিটিংস ব্যবহার করলে বহু বছর ধরে বাড়ির সিস্টেমগুলো কার্যকর থাকে। ভুল বা নিম্নমানের ফিটিংস ব্যবহারের ফলে বাড়ির লাইনগুলোতে লিকেজ, চাপ কমে যাওয়া বা পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।’

মো. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘পানি সরবরাহের লাইন থেকে শুরু করে নিষ্কাশনব্যবস্থা পর্যন্ত সবকিছুই নির্ভর করে সঠিক ফিটিংসের ওপর। পিভিসি ফিটিংস যদি ভালো মানের হয় তাহলে তা দীর্ঘ মেয়াদে পানির চাপ সহ্য করতে সক্ষম হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কমে যায়। এ ছাড়া সঠিক ফিটিংস ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও কম থাকে। কারণ, পানির লাইন লিকেজ হলে পানিতে ময়লা বা ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে।’

নিম্নমানের পাইপ ও ফিটিংস বিষয়ে মো. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘এর ফলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পানির লিকেজ। এতে শুধু পানি অপচয় হয় না, বরং বাড়ির দেয়াল এবং মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে মেরামতের খরচ বেড়ে যায় এবং বাড়ির সৌন্দর্য নষ্ট হয়। দীর্ঘদিন ধরে পানি লিকেজ থাকলে ছাদে এবং মেঝেতে স্যাঁতসেঁতে ভাব দেখা দেয়, যা থেকে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। এ ছাড়া নিষ্কাশনের পাইপে সমস্যা হলে পানির নিষ্কাশনব্যবস্থা ব্যাহত হয়। ফলে বাড়ির চারপাশে দুর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়।’

সঠিক পিভিসি ফিটিংস কেনার আগে লক্ষণীয়

উচ্চমানের উপাদান: পিভিসি পাইপ এবং ফিটিংস কেনার সময় অবশ্যই উচ্চমানের উপাদান নির্বাচন করতে হবে। মানসম্মত উপাদান না হলে তা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চাপ সহ্য করার ক্ষমতা: পাইপের ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখা উচিত, তা কতটা চাপ সহ্য করতে সক্ষম। পানি সরবরাহের লাইন বা গ্যাসলাইনের জন্য শক্তিশালী ফিটিংস প্রয়োজন, যাতে লিকেজের ঝুঁকি না থাকে।

তাপপ্রতিরোধ ক্ষমতা: বাংলাদেশের তাপমাত্রা মৌসুমভেদে ভিন্ন থাকে। তাই ফিটিংসের তাপ সহ্য করার ক্ষমতা থাকা উচিত। নিম্নমানের পিভিসি ফিটিংস গরমে প্রসারিত বা সংকুচিত হয়ে লিকেজ তৈরি করতে পারে।

অতিরিক্ত রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম হওয়া: সঠিক ফিটিংস ব্যবহার করলে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সমস্যা দেখা যায় না, ফলে রক্ষণাবেক্ষণে অতিরিক্ত খরচ হয় না।

বাহ্যিক স্থায়িত্ব: পিভিসি ফিটিংসের স্থায়িত্ব বাড়ির বহিরাংশের নান্দনিকতা এবং নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলে। ভালো মানের পিভিসি ফিটিংস দীর্ঘদিন ধরে মসৃণ ও স্থিতিশীল থাকে।

দেশে পিভিসি ফিটিংসের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপের বিক্রয় বিভাগের পরিচালক মো. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘পাইপ-ফিটিংস বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সবাই গুণগত-মানসম্পন্ন সঠিক পণ্যই বাছাই করে। ফলে তাঁদের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে পিভিসি ফিটিংসের বাজার আরও প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান হিসেবে পিভিসির চাহিদা বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশেও এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ভবিষ্যতে এর উৎপাদন আরও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছি।’