যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (১২ রবিউল আউয়াল) সারা দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়েছে। মহান আল্লাহর হাবিব আখেরি নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জন্ম এবং ওফাতের দিন এটি।
হিজরি সালের তৃতীয় মাস পবিত্র রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে বিশ্বনবী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবদুল্লাহ। খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিতে তাঁর জন্মবছর ছিল ৫৭০ সাল। একই তারিখে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জশনে জুলুশ বের করা হয়। ঢাকাসহ সারা দেশে মহানবী (সা.)-এর জীবন নিয়ে সেমিনার, আলোচনা, শোভাযাত্রা, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাতের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করা হয়।
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবদুর রশিদ প্রমুখ।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.) নামের একটি প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, দোয়া ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে ৩০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। বয়সভেদে এসব ব্যক্তি ৭টি ক্যাটাগরি—পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ, নাতে রাসুল (সা.), কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, তথ্যপ্রযুক্তি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বুধবার থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ১৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আলোচনা, মিলাদ মাহফিল ও শোভাযাত্রা।
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে এসেছিলেন তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের মহান বাণী নিয়ে। সে সময় আরবের সমাজ ছিল পৌত্তলিকতা, ঘোরতর অন্যায়-অবিচারের অন্ধকারে নিমজ্জিত। ‘আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ’ বলে সেই সময়টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই অন্ধকারে মহানবী (সা.) এসেছিলেন আলোকবর্তিকার মতো।
শৈশব থেকেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিচক্ষণতাসহ অনুপম চারিত্রিক গুণাবলি, অপরিমেয় দয়াসহিষ্ণুতা, সহমর্মিতার মতো মহৎ গুণের জন্য আরব সমাজের সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। নবুয়ত লাভের আগেই ‘আল-আমিন’ তথা বিশ্বস্ত অভিধায় তাঁকে সম্মানিত করেছিল আরব সমাজ।
হেরা পর্বতের গুহায় গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৪০ বছর বয়সে ওহি লাভ করেন। এরপর পরম করুণাময় আল্লাহর নির্দেশে দীর্ঘ ২৩ বছর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচার করেন। আল্লাহর প্রতি অসীম ও অতুলনীয় আনুগত্য এবং ভালোবাসার পাশাপাশি মহৎ মানবিক চারিত্রিক গুণাবলির জন্য তিনি সর্বকালে সর্বজনের কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে অভিষিক্ত।