ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরের উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গার আকমল আলী সড়কের জেলেপাড়াটি বরাবরের মতো ডুবেছে জোয়ারের পানিতে। এখানকার প্রায় ৩০০ ঘরে আজ রোববার দুপুরে জোয়ারের পানি ঢুকে। এর আগে ঘূর্ণিঝড়সংক্রান্ত সতর্কবার্তা বাড়তে থাকলে তাঁরা নিজেদের জাল, নৌকাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরিয়ে নেন।
এই জেলেপল্লি প্রতিবার ঝড়ের কবলে পড়ে। মূলত আকমল আলী সড়ক মৎস্যজীবী ঘাটের পাশে জেলেপাড়াটির অবস্থান বেড়িবাঁধের বাইরে। এ কারণে দ্রুত জোয়ারের পানি সেখানে ঢুকে পড়ে। তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি। এর আগে গত বছর মোখার সময়ও অল্প পানি ঢুকেছিল এখানে। তবে বেশি ক্ষতি হয়েছিল ২০২২ সালের অক্টোবরের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে। তখন জেলেদের ঘর ভেঙেছে, জাল ভেসে গেছে। কোনোরকমে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন পাড়ার বাসিন্দারা।
এর পর থেকে ঝড়ের সতর্কতা জারি হলে বাসিন্দারা সতর্ক হয়ে পড়েন। এবারও রিমালের সতর্কবার্তা শুরু হওয়ার পর থেকেই তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করে। এ জন্য আগে থেকে তাঁদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন মাছ ধরার জাল বেড়িবাঁধসংলগ্ন রাস্তার পাশে নিয়ে রাখেন। জালের পাশাপাশি ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও সরিয়ে রাখেন। গতকাল বেলা একটার দিকে পানিতে তলিয়ে যায় পুরো জেলেপাড়াটি।
জেলেপাড়ার সরদার হরিদাস বলেন, দুপুরে জোয়ারের পানি ঢুকে সব তলিয়ে যায়। জাল এবং জিনিসপত্র আগেই সরিয়ে নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এখানকার ঘরগুলো হলো কাঁচা। বাঁশের বেড়া ও টিন দিয়ে তৈরি এসব ঘর পানি ও বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জোয়ারের পানি নেমে যায়। কিন্তু রাতে আবার জোয়ারের সময় পানি ঢোকার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
জেলেপাড়ার বাসিন্দা তপন দাস ও সুবল দাস জানান, প্রতিবার ঝড়ের আভাসে জাল সরিয়ে নেন তাঁরা। কিন্তু ঘরে পানি ঢোকায় পুরো এলাকা কাদায় একাকার হয়ে গেছে। আবারও রাতে পানি আসতে পারে।
জেলেপাড়া ও আশপাশের ঝুঁকিতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে আজ সকাল থেকে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা কাজ করেন। তবে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে পাড়ার আশপাশেই অবস্থান করছিলেন। জাল, রশি, ড্রামসহ নানা সামগ্রী ফেলে দূরে কোথাও যেতে চাননি তাঁরা। দুপুরে পানি ঢোকার কারণে অনেকে খাওয়াদাওয়া করতে পারেননি।
বিকেলে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও দুর্গত স্থান পরিদর্শন করে তাঁদের সাহায্যের জন্য তালিকা তৈরি করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। দুর্গত মানুষের জন্য ১ হাজার ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৮২টি মেডিকেল দল গতকাল সকাল থেকে কাজ শুরু করে। পাশাপাশি উপকূল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করা হয়েছে।
উপকূলীয় উপজেলাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে রিমাল মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ছয়টি উপজেলায় ৩৮ টন চালের পাশাপাশি নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রিমাল মোকাবিলার প্রস্তুতি সভাও হয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। উপকূলীয় উপজেলাগুলোর মানুষদের ঝড় থেকে রক্ষার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। তাঁদের সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে আমাদের দল। এ ছাড়া মেডিকেল টিমও সিভিল সার্জন প্রস্তুত রেখেছেন। বিভিন্ন জায়গায় কাজ শুরু করেছে মেডিকেল টিম।’