প্রজননস্বাস্থ্য

বয়ঃসন্ধিতে লজ্জা–সংকোচ আর নয়

সিলেটে ‘কৈশোর ও যুববান্ধব প্রজননস্বাস্থ্যসেবা’ বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সুখী জীবন প্রকল্পের সহযোগিতায় পাথ ফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘কৈশোর ও যুববান্ধব প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক কর্মশালায় অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা। গতকাল সিলেট নগরের একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে
ছবি: প্রথম আলো

প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কিশোরী ও তরুণীদের মধ্যকার সামাজিক ও পারিবারিক বেড়াজাল ভাঙতে হবে। ‘ট্যাবু’ ভেঙে খোলাখুলি কথা বলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকেরা এখনো প্রজননস্বাস্থ্য কিংবা বয়ঃসন্ধি নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। সমাজ ও পরিবারেও এটা নিয়ে কথা বলতে অনেকে সংকোচে পড়েন। এই লজ্জা–সংকোচ কিশোরী ও তরুণীদের চিকিৎসাসেবায় বড় বাধা। তাই কৈশোরকাল থেকেই প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেট নগরের জেলরোড এলাকার একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে ‘কৈশোর ও যুববান্ধব প্রজননস্বাস্থ্যসেবা’ বিষয়ে কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সুখী জীবন প্রকল্পের সহযোগিতায় পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও প্রথম আলো এটির আয়োজন করে।

এ আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো সিলেট বন্ধুসভা। কর্মশালায় সিলেটের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। কর্মশালা শেষে তাঁদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন অতিথিরা।

কর্মশালায় সুখী জীবন প্রকল্প পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের অ্যাডলসেন্ট ও ইয়ুথ স্পেশালিস্ট ফাতেমা শবনম বলেন, প্রায়ই দেখা যায়, কিশোরী ও তরুণীরা লজ্জা ও সংকোচের কারণে প্রজননস্বাস্থ্যের সমস্যা নিজেদের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। এতে সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। প্রজননস্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক ভুল ধারণা থাকে, যা বাস্তবসম্মত নয় বা এর কোনো ভিত্তি নেই।

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, কিছু ক্ষেত্রে সমাজে কিছু কুসংস্কার থাকে। যেমন মাসিক হলে মাছ-মাংস খাওয়া যাবে না, সে সময় আলাদা থাকতে হবে। আবার প্রসবকালীন সমস্যা এড়াতে গর্ভাবস্থায় কম খেতে দেওয়া হয়। এসব ভুল ধারণা ভাঙতে অভিভাবকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

কর্মশালায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল সিলেটের আঞ্চলিক প্রোগ্রাম ম্যানেজার চিকিৎসক মিশাল চন্দ্র পাল। ধারণাপত্রে তিনি বেসরকারি সংস্থার জরিপ তুলে ধরে বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগের বয়স ১০ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। দেশে প্রতিবছর ১১ হাজার ৯৫৬ নারী জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে ৬ হাজার ৫৮২ জন মারা যান। কৈশোরে মাসিক অব্যবস্থাপনা, ১৮ বছরের আগে বিয়ে, অধিক সন্তান জন্মদান ইত্যাদি জরায়ু ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া সিলেট অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রুপালী দাস জানায়, কর্মশালায় এসে নিজেদের স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে সে জানতে পেরেছে। সেই সঙ্গে কম বয়সে বিয়ে হলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা, বিশেষ করে জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, সেটিও জেনেছে।

সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অনুপমা দাস বলেন, কর্মশালায় তিনি প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত সামাজিক কিছু রীতি যে ‘কুসংস্কার’, সেগুলোর বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

সিলেটের সার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র সৈনিক বৈষ্ণব জানায়, সে আবাসিক ছাত্রাবাসে থাকে। বয়ঃসন্ধি নিয়ে পরিবারের সদস্য বা অন্য কারও সঙ্গে আলাপ করতে সংকোচ লাগত তার। তবে কর্মশালায় যোগ দিয়ে খোলামেলা আলাপে সেই সংকোচ কেটেছে।

প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আগে অনলাইনের মাধ্যমে কিছু ধারণা পেলেও নানা জিজ্ঞাসা ছিল। সেগুলোর উত্তর কর্মশালায় এসে পাওয়া গেছে বলে জানায় মদনমোহন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফুয়াদ আহমদ।

কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখা ক্ষতির কারণ কি না এবং ক্যানসার বংশগত রোগ কি না, শিক্ষার্থীরা জানতে চায়। এর উত্তরে বক্তারা বলেন, নিয়ম মেনে মাসিক বন্ধ রাখার পিল খেলে ক্ষতি নেই। এ ছাড়া একই ধরনের ক্যানসার ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন ক্যানসার সাধারণত বংশগত হয় না বলে জানান তাঁরা।

কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন সুখী জীবন প্রকল্প এবং পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের অ্যাডলসেন্ট ও ইয়ুথ কো-অর্ডিনেটর সুমন কুমার, পাথফাইন্ডার দিশারী প্রকল্পের যোগাযোগ কর্মকর্তা মাহবুবা ফাহমী তামান্না, প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী ও সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ।

কর্মশালায় জানানো হয়, সিলেট থেকে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী দুজন ঢাকার জাতীয় কর্মশালায় অংশ নেবেন।