নূহ-উল-আলম লেনিন একাধারে রাজনীতিবিদ, লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক। কিশোর বয়স থেকেই তিনি সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জীবনের পড়ন্ত বেলায় ৬৬ বছর বয়সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এখন ৭৭ বছর পার করছেন তিনি। নূহ-উল-আলম লেনিন আলোর পথের যাত্রী।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্মাননা গ্রন্থের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেটি চূড়ান্ত রূপ পেল আজ। রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে আজ শনিবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশিত হলো ‘পান্থজনের কথা’ নামে এই সম্মাননা গ্রন্থটি। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত হয়ে নূহ-উল-আলম লেনিনের কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেছেন। সেখানে নূহ-উল-আলম লেনিনও নিজের অনুভূতি ব্যক্তি করেন। প্রায় হাজার পৃষ্ঠার সম্মাননা গ্রন্থটিতে প্রবীণ-নবীন মিলিয়ে ১০৬ জনের লেখা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন শুধু এ দেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক গুণী ব্যক্তির জন্ম হয়; যাঁরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁরা রাজনীতিবিদ হতে পারেন, অর্থনীতিবিদ হতে পারেন, শিল্প-সাহিত্যিক বা কবি হতে পারেন, যে যাঁর ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। সেভাবেই মানবসভ্যতা অগ্রসর হয়। কিন্তু এই ধরনের গুণী ব্যক্তিদের সাধারণত মরণোত্তর সম্মান দেওয়া হয়। সেই জায়গায় কিছু পরিবর্তন এনে গুণী ব্যক্তিদের জীবদ্দশায় তাঁদের অবদান ও অমূল্য কর্মের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যেও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন রাজনীতিতে বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা খুবই দুর্বল হচ্ছে। একটি শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। বিএনপি ১৫ বছর যাবৎ আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো দল, যে দলের শিকড় অনেক গভীরে, বিএনপি আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না। তারা আরও একবার ব্যর্থ হবে।
নূহ-উল-আলম লেনিন একসময় বামপন্থী রাজনীতি করলেও ১৯৯৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন ‘আমি আগের মতো অন্ধভাবে মার্ক্সবাদ গ্রহণ করিনি, আবার দক্ষিণপন্থীদের মতো অন্ধভাবে মার্ক্সবাদকে পরিত্যাগ করিনি। মার্ক্সবাদ বলেন বা যেকোনো ভাবাদর্শ বলেন, তার মধ্যে যেগুলো মহৎ, যেগুলো প্রাসঙ্গিক, সেটিকে ধারণ করি, পালন করি।’
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, নূহ-উল-আলম লেনিন আলোর পথের যাত্রী।
সম্মাননা গ্রন্থের নির্বাহী সম্পাদক ঝর্না রহমানের সঞ্চালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কবি অসীম সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নূহ-উল-আলম লেনিনের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে শোনান শামা রহমান। বিকেল থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান শেষ হয় রাত সোয়া আটটার দিকে।