ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু কমছে না। বরং হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মধ্যে মৃত্যুর হার আরও বাড়ছে। দেখা গেছে, ৬৩ শতাংশ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটছে হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মধ্যে। গত আগস্ট মাসেও হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ৫৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে।
এরই মধ্যে গতকাল সোমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে ৮৩৯ জনের মৃত্যু হলো। আর চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হলো ২৪৬ জনের।
চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৪ হাজার ১২৭ এবং ঢাকার বাইরে ৯৬ হাজার ৬৪১ জন রয়েছেন।
গতকাল অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল আটটা থেকে সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে ঢাকায় ১০ জন এবং ঢাকার বাইরে সাতজন মারা গেছেন। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে ৩ হাজার ৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৯৪ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ২ হাজার ১৯০ নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৪ হাজার ১২৭ এবং ঢাকার বাইরে ৯৬ হাজার ৬৪১ জন রয়েছেন।
এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর একটি বৈশিষ্ট্য হলো বেশির ভাগেরই মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মধ্যে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত আগস্ট মাসে তাদের এক বিশ্লেষণে জানায়, অর্ধেকের বেশি মৃত্যু ঘটেছে হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আর ৮০ ভাগের বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে। চলতি বছরের শুরু থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান ৪৪৪ জন। তাঁদের মৃত্যু নিয়েই ডব্লিউএইচওর বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, এ সময়ে ২৪৭ জন বা ৫৬ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মধ্যে। আর ৮১ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয় দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপাত্ত নিয়েই এ বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও।
গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুতে যতজন মারা গেছেন, তাঁদের ৬৩ শতাংশই এক দিনের বেশি হাসপাতালে টিকতে পারেননি।
হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মধ্যে রোগীদের মৃত্যুকে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ভীতিকর বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরের ব্যবস্থাপনার কারণে এত অল্প সময় রোগীরা হাসপাতালে টিকছেন, এটা আমি মনে করি না। আমাদের গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্বাস্থ্য পরিষেবা থাকলেও সেগুলোকে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত করা হয়নি। যেমন কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাই রোগী আক্রান্ত হলেও অনেক ক্ষেত্রে বুঝতে পারছেন না। হঠাৎ পরিস্থিতি খারাপ হলে বড় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যখন নেওয়া হচ্ছে, তখন দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান মনে করেন, দুই ধরনের ব্যবস্থা নিলে মৃত্যু কমতে পারে। এক. সচেতনতা বৃদ্ধিসহ মশার বংশবিস্তার রোধ করার মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দুই. ডেঙ্গু টেস্টের মান বাড়াতে হবে এবং দাম সাশ্রয়ী করতে হবে। প্রয়োজনে বিনা মূল্যে টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে।