ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে দুর্যোগ সতর্কতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ডিজাস্টার অ্যালার্ট অ্যান্ড কো–অর্ডিনেশন সিস্টেম (জিডিএসিএস)। সংস্থাটি এই মুহূর্তে বিশ্বে চলমান দুর্যোগগুলোর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখাকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
জিডিএসিএস হলো জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় কমিশনের একটি সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক। এটা বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ মোকাবিলায় তথ্য সহযোগিতা দিয়ে থাকে। আজ সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে এসব তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় বাতাসের গতি সর্বোচ্চ ২০৪ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। আর দুই মিটার (৬ ফুটের বেশি) পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি নিয়ে জাতিসংঘের আওতায় পরিচালিত মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা-ওসিএইচএ এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ দুর্যোগ বিষয়ক সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে গত দুই দিনে তিনটি সভা করেছে। সেখানে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতে নিয়োজিত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং আবহাওয়া দপ্তরগুলোর পূর্বাভাসের মধ্যে সমন্বয় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঝড়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
ঘূর্ণিঝড়টি নিয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি), ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি), ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট এবং গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিষ্টেম আলাদা আলাদা পূর্বাভাস দিয়েছে। সবগুলো সংস্থার পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়টি ঘন্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার গতি নিয়ে আঘাত হানতে পারে বলে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে বলা হচ্ছে। ফলে ওই ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত হানতে পারে এমন এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুতির বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন থেকে সব পর্যটক এবং বাইরের মানুষরা সরে গেছে। স্থানীয় প্রায় আট হাজার মানুষকে সেখানকার উঁচু ভবন ও শক্ত অবকাঠামোগুলোতে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরের মধ্যে নিরাপদ ও পাকা অবকাঠামোর মধ্যে রাখা হচ্ছে। আর ঝড়ে তাদের বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করে পর্যাপ্ত ঘর বানানোর উপকরণ মজুদ রাখা হয়েছে। চিকিৎসা ও উদ্ধার কর্মীরাও প্রস্তুত আছে।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবিধি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তারা সর্বশেষ ১২ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১৩০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। তবে সংস্থাটি এখনো জলোচ্ছ্বাসের বিষয়ে কোনো পূর্বাভাস দেয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আমরা রাতের মধ্যে আরেকটি হালনাগাদ পূর্বাভাস দিবো। সেখানে সতর্ক সংকেত এবং সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাস বিষয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হবে।’
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে দেওয়া সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এটি বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল এবং মিয়ানমারের দিকে এগোচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি ১৬০ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।