দুর্নীতি দমনে জড়িতরাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন

দুর্নীতি দমনে ক্ষমতা ও স্বার্থ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে দুর্নীতি দমনে জড়িত কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। দুর্নীতি কারা করেছেন, কীভাবে হয়েছে—জানার পরও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিরোধী দলকে দমনে ব্যবহৃত হয়। ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা আইন অমান্য করতে ভয় পান না।

গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস মিলনায়তনে আয়োজিত ‘পাওয়ার, গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ফিজিবল অ্যান্টিকরাপশন’ শীর্ষক কাজী আলী তৌফিক স্মারক বক্তৃতায় এসব বিষয় ওঠে আসে। এতে বক্তৃতা করেন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক হুসেন খান। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে।

মুশতাক হুসেন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি শক্তিশালী হলে অনিয়মে জড়িতদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনা যাবে। কিন্তু সামগ্রিক বিচারে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে দুর্নীতি কমেনি, বরং বাড়ছে। দুর্নীতিবিরোধী অনেক ব্যয়বহুল কৌশলই ব্যর্থ হয়েছে।

দুর্নীতি দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষমতা কম থাকে অথবা তাঁরাও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন মন্তব্য করে মুশতাক হুসেন বলেন, সমাধানের বদলে তাঁরাই সমস্যার অংশ হয়ে যান। যে সমাজের ৯০ শতাংশ মানুষ আইন মানে, সেখানে পুলিশ-আদালত কার্যকর কাজ করতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ আইন না মানলে শুধু পুলিশ-আদালতের ওপর নির্ভর করলে চলে না। সেখানে দুর্নীতি দমনে ক্ষমতা ও স্বার্থ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশের মতো দেশে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি উচ্চমাত্রায় নয় বলে উল্লেখ করে মুশতাক হুসেন বলেন, কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি বেশি, কিছু ক্ষেত্রে কম। তাই দুর্নীতি কমানোর বিষয় খাতভিত্তিক দেখতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য খাতেই বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি থাকতে পারে। যেখানে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন নিজেদের স্বার্থে দুর্নীতি কমাতে চায়, সেখানে দুর্নীতি কম হয়। এ ক্ষেত্রে স্বার্থের পাশাপাশি ক্ষমতাও থাকতে হবে। বাংলাদেশেও দুর্নীতি কমানোর সুযোগ রয়েছে।

অধ্যাপক মুশতাক বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্রদের স্বার্থ থাকে, কিন্তু ক্ষমতা থাকে না। আবার ধনীদের ক্ষমতা থাকে, কিন্তু তাঁরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতো সমজাতীয় প্রতিষ্ঠান বাঁধ নির্মাণ করে। কোনো ক্ষেত্রে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি হচ্ছে, কোথাও ভালো কাজ হচ্ছে। স্থানীয় অবস্থাসম্পন্ন মানুষ কাজের তদারকিতে যুক্ত হলে, কাজের মান নিয়ে অভিযোগ তুললে দুর্নীতি কমে যায়। এই লোকদের কীভাবে কাজের তদারকিতে যুক্ত করা যায়, তা দেখতে হবে।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, বাংলাদেশে গোপন তথ্য পাওয়া এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ দুর্নীতি কমাতে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তথ্যের বিকল্প নেই।