পিটার হাসের ঘটনা

এবার ‘মায়ের কান্না’কে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৪ ডিসেম্বর সকালে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় গিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস
ছবি: সংগৃহীত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রাষ্ট্রদূতকে রাস্তাঘাটে ধরে স্মারকলিপি দেওয়ার কোনো সংস্কৃতি তো বাংলাদেশে নেই। ‘মায়ের কান্না’ নামের সংগঠন কেন মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ না করে ওখানে স্মারকলিপি দিতে গেল? এটা তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর দপ্তর ছাড়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। সরকার এমনটি করতে উৎসাহিত করছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘না, আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে বিশ্বাস করি এবং তা উৎসাহিত করি। এভাবে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টাকে আমরা উৎসাহিত করি না।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১৪ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় যান। প্রায় এক দশক ধরে সাজেদুলের খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার। সাজেদুলের বোন গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’–এর সমন্বয়ক। রাষ্ট্রদূত যখন ওই বাসায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সে সময় ওই বাড়ির সামনে সমবেত হয়েছিলেন মায়ের কান্না নামের একটি সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্যের ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরি গিয়েছিল, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন মায়ের কান্না।

এই সংগঠনের নেতা–কর্মীদের অবস্থান দেখে নিরাপত্তাকর্মীদের পরামর্শে সাজেদুলের বাসার কর্মসূচি সংক্ষেপ করে বেরিয়ে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ সময় মায়ের কান্নার লোকজন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান। ওই ঘটনার পরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তিনি। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস শাহীনবাগের যে বাড়িতে গিয়েছিলেন, সে বাড়ির দরজা পর্যন্ত মায়ের কান্নার লোকজনকে কেন যেতে দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো জানতাম না উনি ওখানে গেছেন।’

শাহীনবাগের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো অবনতির আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘এটা ছোটখাটো ঘটনা, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপ্তি অনেক বিস্তৃত ও গভীর।’ কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে বোমা হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকারের আমল ছাড়া বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্রদূতের ওপর সরাসরি হামলার ঘটনা ঘটেনি।

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের একটা প্রচারণা চলছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আসলে এটা পশ্চিমাদের মজ্জাগত। তারা কোথাও যদি কোনো নির্বাচন হতে দেখে এবং সেই দেশ যদি দরিদ্র হয় বা উন্নয়নশীল দেশ হয়, তখন সেখানে তারা নানা পর্যবেক্ষণ দেয়।’

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রথমত, অনেকে অবিশ্বাস করে, বাংলাদেশ এত ভালো করল কেমনে? ভালো করছে, সুতরাং ওদের দাবাইয়া রাখো। দাবাইয়া রাখতে হলে ওখানে কিছু সমস্যা তৈরি করতে হবে, অস্থিরতা সৃষ্টি করতে হবে। যে দেশে অস্থিরতা হয়েছে, সে দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। আপনি লিবিয়ার দিকে তাকান। তারা অনেক ভালো ছিল, তারা ঋণ নিত না। অস্থিরতায় সব শেষ হয়ে যায়। এরা অনেকে দেখতেছে, বাংলাদেশ ভালো করছে, তাই এদের আটকাও। এটা মজ্জাগত সমস্যা। এটা তো নতুন না, ঐতিহাসিক।’

কারা বাংলাদেশকে নিয়ে এমনটা করছে, সে প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা শক্তিশালী, বুদ্ধিমান দেশ, তারা করে। আর এর সঙ্গে কিছু কিছু দেশীয় লোক যোগ দেয়। যোগ দিয়ে তারা পায়ে কুড়াল মারে। তাদের কিছু লক্ষ্য থাকে। আরেকটা হচ্ছে, তাদের নিজেদের ধ্যানধারণা আছে। সে ধ্যানধারণা মনে করে অন্য দেশও ফলো করবে। আমরা জাতিসংঘে প্রায়ই বলি, একই মডেল সব জায়গায় গ্রহণযোগ্য নয়। দেশে দেশে মডেলের তারতম্য হয়। ওরা মনে করে, তাদের যে মডেল, ওটাই ঠিক। ওটাই তারা চাপিয়ে দিতে চায়।’

বাংলাদেশকে এখন আর চাপিয়ে দেওয়ার অবস্থা নেই বলে মন্তব্য করেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা গোলামির মতো অবস্থায় নাই, সে জন্য তারা আমাদের বেশি চাপ দেয়। তারা সঙ্গে কিছু লোকজন নিয়ে আমাদের প্রেশার দেয়। তাদের মডেল একটা আছে ফাইন। কিন্তু আমরা অন্যের কাছে যাই না। তাদের মডেলের ভালো-মন্দ আছে। সব মডেলের ভালো-মন্দ আছে। সুতরাং তারা অনেক সময় চায় তার মডেলটা...।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘না, হচ্ছে না। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুব নিবিড়। আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অনেক ভালো। যার কারণে তারা আমাদের অনেক কিছু বলতে পারে।’