গত ১৩ দিনে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে মামলা ও গ্রেপ্তার তুলনামূলক বেশি হচ্ছে রাজশাহী, রংপুর ও বগুড়ায়।
সারা দেশে আরও অন্তত ৪০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রোববার দুপুর থেকে গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত সময়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষ–সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গত ১৩ দিনে সারা দেশে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা ১৭ জুলাই থেকে দেশের মহানগর, জেলা ও থানা-পুলিশ সূত্র থেকে মামলা ও গ্রেপ্তারের তথ্য সংগ্রহ করছেন। গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে মোট ১০ হাজার ২৮ জন গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে।
কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা করে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং দল দুটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অবশ্য পুলিশ দাবি করছে, যারা সহিংসতার ঘটনায় জড়িত ছিল, তাদেরই কেবল গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে রোববার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫৬ জনকে। এ নিয়ে রাজধানীতে মোট ২ হাজার ৮২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীতে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ২৪৩টি।
মহানগরের বাইরে ঢাকার ধামরাই, সাভার, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানায় গতকাল পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২৩টি। এসব স্থানে গতকাল সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে র্যাব জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৩৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮৩ জন, ঢাকার বাইরে ২৫১ জন।
গত রোববার দুপুর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে আরও ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময়ে সেখানে আরও দুটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ২৯টি মামলায় নারায়ণগঞ্জে মোট ৫৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গাজীপুরেও নতুন করে দুটি মামলা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২২ জনকে। এ নিয়ে গাজীপুরে মোট ৪২টি মামলায় ৪৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদারীপুরেও নতুন করে দুটি মামলা হয়েছে। এই জেলায় এ পর্যন্ত ১৩টি মামলায় ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় ৩১ মামলায় রোববার আরও ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই বিএনপির নেতা-কর্মী। এ নিয়ে মহানগর ও জেলায় মোট ৯৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেনীতে রোববার বিকেল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিএনপির আরও সাতজন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ফেনী সদর মডেল থানায় করা দুটি বিস্ফোরকদ্রব্য ও নাশকতার মামলায় গত ১১ দিনে মোট ৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, তাঁদের দেড় শতাধিক নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে মামলা ও গ্রেপ্তার তুলনামূলক বেশি হচ্ছে রাজশাহী, রংপুর ও বগুড়ায়। রাজশাহী মহানগর ও জেলা মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৭টি মামলা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজশাহীতে এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তার ৩৮৩ জন। বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই জেলায় ১৫টি মামলায় গতকাল পর্যন্ত ১৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রংপুরে নতুন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৪ জনকে। রংপুর মহানগর ও জেলা মিলিয়ে গতকাল পর্যন্তত ২২টি মামলায় ২৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর মহানগর এলাকায় ১৮৬ জন এবং জেলায় ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কোথাও কোথাও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মামলা না হলেও পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার চলছে। যশোরে পুরোনো মামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৭ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত সেখানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১৫ জন।
সংশোধনী
গতকাল প্রথম আলোতে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা অসাবধানতাবশত ১০ হাজার ২৮ জন ছাপা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাটি হবে ৯ হাজার ৬২৫।