কর্ণফুলী নদীতে জাহাজডুবি

পাখা খুলে উল্টে যায় জাহাজ, ক্যাপ্টেনসহ ছয়জনের মৃত্যু

দুর্ঘটনার কারণ বের করতে জাহাজ নিবন্ধনকারী সংস্থা নৌ বাণিজ্য কার্যালয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ফারুক বিন আবদুল্লাহ
ফারুক বিন আবদুল্লাহ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে জাহাজডুবির ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে নদীর বিভিন্ন জায়গা থেকে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে তাঁদের লাশ ভেসে ওঠে। এর আগে গত বুধবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজন মারা যান। এখনো নিখোঁজ আছেন দুজন।

নদী থেকে লাশ উদ্ধার হওয়া পাঁচজন হলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন ফারুক বিন আবদুল্লাহ, প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, প্রধান কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, ফিশ মাস্টার জহির উদ্দিন ও ডক কর্মচারী রহমত আলী। বুধবার রাতে ওই জাহাজের ডুবুরি মো. ফয়সাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

নৌ পুলিশ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার সময় রেনকন ওশেনিয়া লিমিটেডের ‘এফভি মাগফেরাত’ নামের মাছ ধরার জাহাজটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগরে সি রিসোর্সেস শিপইয়ার্ড লিমিটেডে মেরামতের জন্য ওঠানোর সময় পাখা খুলে যায়। এ সময় জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের বয়া ও অন্যান্য জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পুরোপুরি উল্টে ডুবে যায়। তখন ৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন আশপাশের জাহাজের লোকজন। ক্যাপ্টেনসহ সাতজন নিখোঁজ ছিলেন।

গভীর সাগরে চলাচল করা এই জাহাজ হঠাৎ কীভাবে উল্টে ডুবে গেল, তা জানতে নৌ বাণিজ্য কার্যালয়সহ কয়েকটি সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। তাঁরা জানান, জাহাজটি পূর্ণ গতি দিয়ে ডকইয়ার্ডে তোলা হচ্ছিল। এ সময় পাখা খুলে গেলে জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। মুহূর্তের মধ্যে উল্টে যাওয়ার কারণে পানির নিচে চলে যান ক্যাপ্টেনসহ নাবিকেরা। কর্ণফুলী নদীর নিচের দিকে স্রোতের মাত্রা বেশি। পানির গভীরে গেলে স্রোতের কারণে ওপরে ওঠা খুবই কঠিন।

এ ঘটনায় জাহাজটি নিবন্ধনকারী সংস্থা নৌ বাণিজ্য কার্যালয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সংস্থাটির প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ার রফিকুল আলমকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নৌ বাণিজ্য অফিসের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজের নিচের অংশ ওপরের দিকে ওঠায় নাবিকেরা আটকা পড়ে যান। এ ছাড়া কোনো নিরাপত্তা ঘাটতি ছিল কি না, কিংবা কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

নিখোঁজ অপর দুজনের খোঁজ চলছে বলে জানায় নৌ পুলিশ। তাঁদের লাশ ডুবন্ত জাহাজের কেবিনে আটকে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সদরঘাট নৌ থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, এফভি মাগফেরাত জাহাজডুবির ঘটনায় নিখোঁজ পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের লোকজন এসে তাঁদের লাশ শনাক্ত করেছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ নিয়ে জাহাজডুবির ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নৌ বাণিজ্য কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এফভি মাগফেরাত জাহাজটি নির্মাণ হয় ১৯৯২ সালে। চিংড়ি মাছ ধরার জাহাজ এটি। প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো জাহাজটি মেরামত করে চালানো হচ্ছে। বর্তমানে যেসব চিংড়ির জাহাজ নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে, সেগুলো এক দশক ধরে প্রতিস্থাপনের অনুমতি বন্ধ রয়েছে। অর্থাৎ এসব জাহাজ কোনো কারণে অচল হলে তা আরেকটি জাহাজের মাধ্যমে প্রতিস্থাপনের সুযোগ নেই। এ কারণে এসব জাহাজ মেরামত করে চালানো হয়।