কাগজে পেনসিলের ব্যবহার হলেও ক্যানভাসে শুধু পেনসিল ব্যবহার করে ছবি আঁকার ধারাটি কমে গেছে। তবে শিল্পী নাইমা হক নিজের ছবিতে পেনসিল ব্যবহারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। এমনকি রং ব্যবহার করে আঁকা ছবিতেও দেখা যাচ্ছে তিনি পেনসিলের দাগ টেনেছেন। রাজধানীর ধানমন্ডির গ্যালারি চিত্রকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তাদের কথায় উঠে এল এসব মন্তব্য।
প্রায় ৫০টি ছবি নিয়ে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর নাম ‘ছন্দে বর্ণে’। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পী রফিকুন নবী এবং শিল্পপতি ও শিক্ষাবিদ রুবানা হক। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুবানা হক বলেন, ছবি শুধু দর্শন তো নয়, বোধের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পী নাইমা হকের আঁকা এই ছবিগুলোতে আছে শিল্প ও দর্শনের সমন্বয়। এ সময় তিনি ‘সঙ্গীতময় প্রকৃতি’ নামে শিল্পীর আঁকা একটি ছবির প্রসঙ্গ টেনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং শিল্পীর দায় নিয়ে কথা বলেন।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে নারী শিল্পীদের প্রদর্শনী করেছিলেন শিল্পী নাইমা হক। সব সময়ই তিনি ব্যবহার করেছেন বড় পরিসরের ক্যানভাস। তবে অন্তর্মুখী এই শিল্পী নিজের ছবি নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যাপারে প্রচারবিমুখ। তাই দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়নি। আয়োজকেরা জানালেন গত ১০ বছর চেষ্টার পর এ প্রদর্শনী সম্ভব হয়েছে। এখানকার অধিকাংশ ছবি ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে আঁকা। কয়েকটি আঁকা প্রবাসে বসে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথমেই বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রদর্শনীর কিউরেটর শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভী দুটি শুভেচ্ছা বক্তব্য পড়ে শোনান দর্শকদের। বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সন্জীদা খাতুন সশরীর উপস্থিত হতে না পারলেও শুভেচ্ছা বাণী লিখে পাঠিয়েছেন শিল্পী নাইমা হকের জন্য। শিল্পী ও অধ্যাপক নাইমা হক প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও পরিসংখ্যানবিদ ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেনের নাতি।
‘ছন্দে বর্ণে’ শিরোনামে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শিল্পী রফিকুন নবী। প্রতিবছর অন্তত একবার করে নাইমা হকের আঁকা ছবি নিয়ে প্রদর্শনী হওয়া উচিত বলে জানান তিনি। এ সময় রফিকুন নবীর কথায় উঠে আসে ছবি আঁকার জন্য নাইমা হকের বিষয় নির্ধারণের প্রসঙ্গ। তিনি জানান, শিল্পী অনেকবার এমন বস্তুকে বিষয় হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যা সবাই করবে না। ‘সেফটিপিন’ বা একটি ‘লাঠি’কে মূল ভাবে রেখে এর মধ্যে তিনি এঁকেছেন নানা রকম ছবি। এভাবে খুব সাধারণ কিছুকেও তিনি বর্ণিলভাবে উপস্থাপন করতে পারেন।
নিজের ছবি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শিল্পী নাইমা হক বলেন, শেষ পর্যন্ত দর্শকই ছবির শেষ বিচারক। নাইমা হকের আঁকা ছবি নিয়ে এটি তৃতীয় প্রদর্শনী। গ্যালারি চিত্রকে ১৩ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। দর্শকদের জন্য প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে উন্মুক্ত থাকবে রাত ৮টা পর্যন্ত।