পাঁচটি বিশেষ ট্রেন ঈদের দিন ছাড়া ১৮ এপ্রিল থেকে ঈদের পরও কয়েক দিন যাত্রী পরিবহন করবে।
ঈদের সময় ট্রেনের টিকিটের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু সে তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা বাড়ে না। তাই অধিকাংশ মানুষকে নির্ভর করতে হয় সড়কপথের ওপর। এতে যাত্রীদের যেমন বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়, তেমনি থাকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এই দুর্ভোগ লাঘব করতে এবারের ঈদযাত্রায় বিশেষ ট্রেন বৃদ্ধি করেছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল।
এবার পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে মোট সাতটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। গতবার এ সংখ্যা ছিল পাঁচ। এসব ট্রেনে আসন রয়েছে ২ হাজার ৪০০টি। এ ছাড়া দাঁড়িয়েও যাওয়ার সুযোগ থাকে। তবে ছাদে করে যাত্রার সুযোগ নেই।
পূর্বাঞ্চলের সাতটি বিশেষ ট্রেনের মধ্যে একটি ট্রেন চলবে চাঁদপুর-সিলেট রুটে। আরেকটি চলবে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে। এই দুটি রুটে আগে কখনো ঈদের সময় বিশেষ ট্রেন চলাচল করেনি।
রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদের সময় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ হাজার টিকিটের চাহিদা থাকে। আগে নিয়মিত ও বিশেষ ট্রেন মিলিয়ে ১০ হাজার পর্যন্ত টিকিট দেওয়া যেত। এবার বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর কারণে বাড়তি যাত্রী পরিবহন করা যাবে। এতে বাড়ি ফেরা মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে দশটি আন্তনগর ও চারটি মেইল এক্সপ্রেস চলাচল করে। ঈদযাত্রার জন্য ট্রেনগুলোর সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
যমুনা নদীর পূর্ব পাশের এলাকা রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এর সদর দপ্তর চট্টগ্রাম নগরের সিআরবিতে।
বিশেষ ট্রেন যখন চলবে
পূর্বাঞ্চল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবারের মতো এবারও চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনকে এই রুটে ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি ট্রেনে আসন রয়েছে ৫১৪টি করে ১ হাজার ২৮টি।
চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল-১ চাঁদপুরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়বে প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টায় আর চাঁদপুর থেকে রওনা দেবে বেলা সাড়ে ৩টায়। চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল-২ চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাবে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে এবং চাঁদপুর থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায়। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুটি ট্রেন চলাচল করে।
চাহিদা থাকলেও চাঁদপুর–সিলেট রুটে কোনো ট্রেন চলাচল করত না। এবারই প্রথম এই রুটে বিশেষ ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ট্রেনে আসন রয়েছে ৪৮৮টি। এই রুটে ট্রেনটি সিলেট থেকে ৪টার ৪০ মিনিটে ছেড়ে চাঁদপুরে পৌঁছাবে রাত সোয়া ১২টায়। আর চাঁদপুর থেকে বিকেল ৪টায় ছেড়ে সিলেটে পৌঁছাবে রাত ১২টায়।
এদিকে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে দুটি ট্রেন চলাচল করলেও ঈদযাত্রায় কখনো বিশেষ ট্রেন ছিল না। এবার রাত ১০টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। আর ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামে রওনা দেবে বেলা ১১টায়। এই ট্রেনে আসন রয়েছে ৪০০টি।
এ ছাড়া ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত একটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এতে আসন রয়েছে ৪৬৬টি। ট্রেনটি ঢাকা থেকে ৯টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে দেওয়ানগঞ্জ পৌঁছাবে ৩টা ৪০ মিনিটে। আবার দেওয়ানগঞ্জ থেকে ৪টা ৪০ মিনিটে রওনা হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে ১১টা ১০ মিনিটে।
এই পাঁচটি বিশেষ ট্রেন ১৮ এপ্রিল থেকে ঈদের দিন ছাড়া ঈদের পরেও কয়েক দিন যাত্রী পরিবহন করবে। এই ট্রেনগুলোতে ১০টি করে কোচ থাকবে।
তবে ঈদের দিন ভৈরববাজার ও ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এগুলোতে থাকবে পাঁচটি করে কোচ। ভৈরববাজার থেকে কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনটি সকাল ৬টায় ছাড়বে। দুই ঘণ্টা পরই গন্তব্যে পৌঁছাবে। আবার কিশোরগঞ্জ থেকে দুপুর ১২টায় ছেড়ে ভৈরবে বেলা ২টায় পৌঁছাবে। আর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনটি সকাল পৌনে ছয়টায় ছেড়ে কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল সাড়ে আটটায়। আর কিশোরগঞ্জ থেকে দুপুর ১২টায় ছেড়ে ময়মনসিংহে পৌঁছাবে বেলা ৩টায়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের জন্য মানুষের পছন্দ ট্রেন। ঈদের সময় স্বাভাবিকভাবে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুটি রুটে প্রথমবারের মতো চলাচল করবে বিশেষ ট্রেন। এতে যাত্রীরা উপকৃত হবেন।