আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
অনুদানসহ অন্যান্য উৎস থেকে আসবে ৯৫২ কোটি ৫ লাখ টাকা।
বরাদ্দ বেড়েছে মশকনিধন খাতে।
সরকারি অনুদাননির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব আয়ের ওপর ভর করে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটে নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর অনুদানসহ অন্যান্য উৎস থেকে আসবে ৯৫২ কোটি ৫ লাখ টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের নন্দনকাননে থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামের (টিআইসি) মিলনায়তনে বাজেট ঘোষণা করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাজেটে নগরের অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে বাজেট বরাদ্দ বাড়েনি। আবার মশকনিধন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলেও শেষ পর্যন্ত তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাজেটে এবার সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে উন্নয়ন খাতে। এরপর রয়েছে বেতন-ভাতা খাতে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৯৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা। সর্বশেষ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৮ শতাংশ।
বাজেট অধিবেশনে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ৯৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ হাজার ৬৬১ কোটি ৯ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট উপস্থাপন করেন মেয়র। এই অর্থবছরে মূল বাজেট ছিল ১ হাজার ৮৮৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮৮ শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়নের এই হার সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এর আগে ৮০ শতাংশের ওপর বেশি বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে ৮৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছিল। ওই অর্থবছরে বাজেটের আকারও ছিল ২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেট ছিল ২ হাজার ৪৫ কোটি ৫১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
সিটি করপোরেশনের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাজেট বাস্তবায়ন ৮৮ শতাংশ হওয়ার পেছনে অন্তত তিনটি কারণ রয়েছে। আগের তুলনায় বাজেটের আকার কমানো হয়েছে। আবার সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত উন্নয়ন অনুদান বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যেমন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের কাছে অনুদান প্রত্যাশা করেছিল ৯৩৬ কোটি টাকা ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু পেয়েছে ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা, যা প্রত্যাশার চেয়ে ৮২ কোটি টাকা বেশি। এ ছাড়া আয়তনের পরিবর্তে ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর আদায় করার কারণে এই খাতেও আয় বেড়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় গৃহকর খাতে আদায় বেশি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
বরাদ্দ বাড়েনি জলাবদ্ধতায়, বেড়েছে মশকনিধনে
দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় পানিতে তলিয়ে যায় নগর। জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সিটি করপোরেশনের। তবে বাজেট খাতে তার ছাপ কম। কেননা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৩৩ কোটি টাকা। যদিও শেষ পর্যন্ত তা পুরোপুরি খরচ করেনি সিটি করপোরেশন। ওই অর্থবছরে খরচ হয়েছে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে চলছে। এই অবস্থায় মশকনিধন খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে সিটি করপোরেশন। এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। যদিও খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
বাজেটে জলাবদ্ধতা ও মশকনিধনের বরাদ্দ প্রসঙ্গে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননের কাজ চলছে। এ ছাড়া নালা-নর্দমা ও খালগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। আর মশকনিধনের বিষয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন। বাজেট বিবরণী উপস্থাপন করেন অর্থ ও সংস্থাপনবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইসমাইল।
নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভরতা, ভরসা গৃহকর
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর এটি চতুর্থ বাজেট। প্রথম বাজেটের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার কমেছে ৪৮২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
এবারের বাজেটে সিটি করপোরেশনের মূল আয় ধরা হয়েছে নিজস্ব উৎস থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সর্বশেষ অর্থবছরে এই খাতে আয় হয়েছে ২৬২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে অন্যান্য কর ও ফিস খাত থেকে আয় হবে ৩৪৪ কোটি টাকা। নিজস্ব সম্পত্তি থেকে ভাড়া ও আয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
সবচেয়ে বেশি ব্যয় যেখানে
বর্তমান মেয়রের চতুর্থ বাজেটে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের খাত হচ্ছে উন্নয়ন খাতে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান দেনার পরিমাণ ৪৪০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে ১৩৬ কোটি টাকা দেনা পরিশোধের লক্ষ্য রয়েছে সংস্থাটির। এ ছাড়া ভূমি ক্রয় ও উন্নয়ন, ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, শৌচাগার নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কেনাকাটায় ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে সিটি করপোরেশনের।
উন্নয়ন খাতের পর সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পারিশ্রমিক পরিশোধে। এই খাতে খরচ করতে হবে ৩২৮ কোটি টাকা। মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় হবে ৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানির জন্য ব্যয় করতে হবে সাড়ে ৬১ কোটি টাকা।