হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

সারা দুনিয়াতেই স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সমস্যা আছে: হাইকোর্ট

সারা দুনিয়ায় মেডিকেল (চিকিৎসা) বিষয়ে একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট কাজ করে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ওষুধসহ মেডিকেল উপকরণের (রি-এজেন্ট) মেয়াদ অনেক সময় শেষ হয়ে থাকে, যে কারণে পরীক্ষার ফলাফল যথাযথ হয় না। তাই ওভার নাইট (রাতারাতি) কিছু হবে না। সারা দুনিয়াতেই স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সমস্যা আছে। সবারই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

শিশু আয়ানের মৃত্যুতে তদন্ত প্রতিবেদনের বিপরীতে রিট আবেদনকারীর পক্ষের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন এবং সারা দেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের তথ্যাদি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল-বিষয়ক শুনানিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এসব কথা বলেন। শুনানি নিয়ে আদালত ২০ ফেব্রুয়ারি আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।  

আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানবিষয়ক তদন্ত প্রতিবেদনে অসংগতি রয়েছে উল্লেখ করে শুনানিতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ বলেন, ‘এটি ম্যানিপুলেট (হেরফের করা) রিপোর্ট।’

সারা দেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন হাসপাতালের তথ্যাদি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বলেন, সারা দেশে লাইসেন্সধারী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩৩। সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭।

শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে কেউ আছেন কি?’ তখন আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন,‘ রুল এখনো জারি হয়নি।’ আদালত বলেন, ‘আপনাদের কী ফাউন্ডেশন আছে?’ কুমার দেবুল দে বলেন, ‘ফাউন্ডেশনের অধীনে কলেজটি চলে।’ আদালত বলেন, ‘তাহলে আপনারাই সব।’ তখন কুমার দেবুল দে বলেন, ‘একটি হলো কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান, অন্যটি চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠান।’ আদালত বলেন, ‘গ্রুপের প্রতিষ্ঠান।’ তখন কুমার দেবুল দে বলেন, ‘মেডিকেল কলেজের দায় ইউনাইটেড হাসপাতালের ওপর দেওয়া যাবে না।’ আদালত বলেন, ‘ফাউন্ডেশনের পক্ষে পাওয়ার (মামলা পরিচালনার জন্য) দিতে পারেন।’

ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে পক্ষভুক্ত হওয়ার আরজি নিয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ২০০৮ সাল থেকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ৭০টি অবহেলাজনিত অভিযোগ পত্রিকায় এসেছে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও যুগান্তরে এসেছে। এর বাইরেও রয়েছে। এখানে রোগীদের কীভাবে দেখা হচ্ছে। দুটি দিকের অপরটি হচ্ছে, চিকিৎসকদের কীভাবে দেখা হচ্ছে। এমন ২৯টি ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। দেখা গেছে, চিকিৎসকের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, হাসপাতালে হামলা হচ্ছে, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে, তাঁকে জেলে যেতে হচ্ছে। শুনানি নিয়ে শিশির মনিরকে ইন্টারভেনার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার পর পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। শিশু আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সারা দেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন কতগুলো হাসপাতাল রয়েছে, তার তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দেওয়া হয়।

আগের ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জানুয়ারি শিশু আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানবিষয়ক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এর বিপরীতে সেদিন শুনানিতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী বক্তব্য তুলে ধরেন। তখন তাঁকে আদালত বলেন, হলফনামা আকারে বক্তব্য দাখিল করেন। প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি দিন রাখা হয়।

ধার্য তারিখে রিট আবেদনকারীপক্ষ হলফনামা আকারে বক্তব্য দাখিলের জন্য শর্ট পাসওভার (স্বল্প সময়ের জন্য মুলতবি) চান। অন্যদিকে সারা দেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন হাসপাতালের তথ্যাদি হাতে এসেছে এবং তা হলফনামা আকারে দাখিল করা হবে বলে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১৮ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি ওঠে।