‘কথা হোক: বাবা-মেয়ের গল্প শুনি’ আয়োজনে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব খ ম হারুন এবং তাঁর দুই মেয়ে কিযী তাহনিন (বাঁয়ে) ও বৃতি সাবরিন। প্রথম আলো কার্যালয়, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি
‘কথা হোক: বাবা-মেয়ের গল্প শুনি’ আয়োজনে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব খ ম হারুন এবং তাঁর দুই মেয়ে কিযী তাহনিন (বাঁয়ে) ও বৃতি সাবরিন। প্রথম আলো কার্যালয়, কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি

চিন্তার সব জানালা খুলে দিয়েছেন এই বাবা

একবার শপিং মলে গিয়ে হঠাৎ দুই বোন তাঁর বাবাকে হারিয়ে ফেললেন। বয়সে তখনো তাঁরা ছোট। এদিক–ওদিক না পেয়ে কান্না শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বাবা তাদের সর্বশেষ যেখানে রেখে গেছেন, সেখানেই তাঁরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর কিছুটা দূর থেকে বাবা পুরো দৃশ্যটাই দেখছিলেন। কারণ, হারিয়ে গেলে সেই পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, সে প্রশিক্ষণই তখন চলছিল।

পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব খ ম হারুন এবং তাঁর দুই মেয়ে কিযী তাহনিন ও বৃতি সাবরিনের গল্প এটি। বড় মেয়ে কিযী লেখক ও উন্নয়নকর্মী এবং ছোট মেয়ে বৃতি দ্য মার্ভেল–বি ইউর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘কথা হোক: বাবা-মেয়ের গল্প শুনি’ আয়োজনে অতিথি হয়ে এসেছিলেন তাঁরা। গল্পে গল্পে বাবা ও দুই মেয়ে নিজেদের সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেন। প্রথম আলো ডটকমের সহযোগিতায় জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ‘সেলিব্রেটিং ডটার্স’ ক্যাম্পেইনের আওতায় বিশেষ এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাবার কোন কথাটি যা সব সময় মনে থাকবে, এমন প্রশ্নে দুই বোনই জানান, ভয় পাওয়া যাবে না এবং ভয়কে জয় করতে শিখিয়েছেন তাঁদের বাবা খ ম হারুন। নিজেদের বেড়ে ওঠার পথে বাবা কখনো সিদ্ধান্তও চাপিয়ে দেননি।

কিযী বলেন, ‘বাবা পুরো পৃথিবীই খুলে দিয়েছেন। চিন্তার সব জানালা খুলে রেখেছেন। কী হতে হবে, কী করতে হবে, সে সিদ্ধান্ত যেন নিজেরা নিতে পারি, সেভাবে বড় করেছেন।’

স্কুল শেষে সহপাঠীদের অনেককেই মা–বাবা নিতে আসতেন। কিন্তু কিযীকে স্কুল বাসে করে ফিরতে হতো। এটা নিয়ে ছোটবেলায় তাঁর খুব অভিমান ছিল। কিন্তু এখন তিনি বোঝেন, ওই একা চলতে শেখা তাঁকে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে।

বৃতি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে পড়ার সময় যখন তাঁর প্রধান (মেজর) বিষয় নির্বাচন করতে হবে, তখন তিনি বুঝতে পারছিলেন না কোন বিষয় নিয়ে পড়বেন।  সেটার ব্যাপারে বাবার পরামর্শ চেয়েছিলেন। বাবা বলেছিলেন, ‘তুমি দেখ কোন বিষয়টি তোমার ভালো লাগে।’ তখন বৃতি তাঁর সব বই ঘেঁটে দেখলেন অনেক বইয়ে কলেমের আঁচড় না পড়লেও, মাকেটিং বই লাল কালির আঁচড়ে ভরা। তখন তিনি বুঝলেন এটাই তাঁর আগ্রহের বিষয়। পরে মার্কেটিংয়ে তিনি পড়েন।

খ ম হারুন যখন নিজে শিক্ষার্থী, তখন তাঁর সঙ্গে অনেক মেধাবী নারী সহপাঠী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা হারিয়ে যান। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি চাননি তাঁর মেয়েরাও হারিয়ে যাক। মেয়েদের সামনে তিনি পুরো পৃথিবীই উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। কোনো কিছুতে বাধা দেননি। আত্মসম্মানের সঙ্গে যাতে তাঁরা বেড়ে ওঠেন, সে চেষ্টা করেছেন। প্রয়োজনে তিনিও মেয়েদের পরামর্শ নেন।

নিজেদের নামের পেছনের গল্পটা বলতে গিয়ে কিযী বলেন, দুই বোনের কারও নামের সঙ্গে বাবা বা মায়ের পদবি নেই। মা–বাবা চেয়েছেন সন্তানেরা যেন নিজের পরিচয়ে পরিচিত হয়। সেই ভাবনা থেকেই এমন নাম রাখা হয়েছিল।

কিযী যেখানেই থাকেন, বাড়ি ফেরার তাড়া অনুভব করেন। কারণ, দরজা খুললেই তিনি বাবার হাসিমাখা মুখ দেখতে পাবেন। অন্যদিকে বাবার ধৈর্য ও অন্যের কথা শুনতে পারার ক্ষমতা পছন্দ বৃতির।

বাবার কাছে যদি চিঠি লেখা হয়, তবে সেখানে কী থাকবে? কিযী জানান, বারবার জন্ম হলে তিনি চাইবেন এই বাবাই যেন তাঁর বাবা হন। আর বৃতির চিঠিতে থাকবে বাবার জন্য ধন্যবাদবার্তা। তাঁর বেড়ে ওঠার পেছনে বাবা যে অবদান রেখেছেন, সে জন্য ধন্যবাদ জানাবেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে এই বাবা ও মেয়েদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রথম আলোর ইংরেজি বিভাগের প্রধান আয়েশা কবির। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সমন্বয়ক সাইদুজ্জামান রওশন। এ ছাড়া গান পরিবেশন করেন প্রথম আলোর ভিডিও বিভাগের নিকিতা নন্দিনী।

‘সেলিব্রেটিং ডটার্স’ ক্যাম্পেইনের এই বিশেষ উদ্যোগে বাবা–মেয়ের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশ করতে পরস্পরকে চিঠি লেখার ‘কথা হোক’ নামের আয়োজনে পাঠকও অংশ নিতে পারবেন।

পাঠক তাঁর কন্যা/বাবার উদ্দেশে লেখা চিঠি celebratingdaughters.pro এই ওয়েব ঠিকানায় জমা দিতে পারবেন অথবা ayojon@prothomalo.com– এই ঠিকানায় ই–মেইল করতে পারবেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিঠি পাঠানো যাবে। বাছাই করা চিঠি নিয়ে প্রকাশিত হবে বই। এ ছাড়া সেরা চিঠি লেখকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারও থাকছে।