নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক যত আইন রয়েছে, তা বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে নেতারা উত্তরাধিকার, পারিবারিক, নাগরিকত্ব ও অভিভাবকত্ব বিষয়ে আইনে নারীর প্রতি যেসব বৈষম্য রয়েছে, তা বাতিল করে সমানাধিকার চেয়েছেন। নারীদের অধিকার রক্ষায় যেসব বিষয় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য নারী অধিকার কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের ব্যাপ্তি ছিল এক ঘণ্টার মতো। দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই ছিল নারীদের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রথম বৈঠক। বৈঠকে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে কাঠামোগত, রাজনৈতিক ও আইনি সংস্কার চাওয়া হয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিক অধিকার রক্ষার দাবি জানানো হয়। বৈঠকে তনু, নুসরাত, মুনিয়া (মোসারাত) হত্যার বিচার দাবি করা হয় এবং কল্পনা চাকমার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে নারী অধিকার কমিশন গঠন, বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংবিধানে সংস্কার আনার প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করা এবং নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রস্তাব নিয়ে নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় অর্থসহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পোশাককর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে চার নারী উপদেষ্টা—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতাদের মধ্যে আইরিন খান, শিরীন হক, শাহীন আনাম, ফাহমিদা খাতুন, সামিয়া আফরিন, তাসলিমা আখতার, ঋতু সাত্তার, বীথি ঘোষ, সুলতানা বেগম, সীমা দাস সীমু, নিগার সুলতানা, সুফিয়া রহমান, তাসকিন ফাহমিনা, মেঘনা গুহঠাকুরতা, রানী ইয়ান ইয়ান, দিলারা চৌধুরী, সারা হোসেন, নিরুপা দেওয়ান, শ্যামলী শীল, নুসরাত তাবাসসুম ও নাবিলা ইদ্রিস উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ না করে নারী অধিকার কমিশন করার দাবি করা হয়েছে।