মুসল্লিদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি রুহুল আমীন গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ পড়াতে পারেননি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ছয় সপ্তাহ পর তিনি গতকাল নামাজ পড়াতে মসজিদে আসেন। এ সময় একদল মুসল্লি রুহুল আমীনকে বিগত সরকারের ‘দালাল’ বলে অভিযোগ তুলে হইচই শুরু করেন। তাঁরা তাঁর পেছনে নামাজ না পড়ার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে খতিবের পক্ষ ও বিপক্ষ দল হাতাহাতি ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে কয়েকজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক মুসল্লি জানান, প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি চলে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে কিলঘুষি, জুতা মারে; এমনকি মুসল্লিদের জুতা রাখার বাক্সও ছুড়ে মারতে দেখা যায়। এ পরিস্থিতিতে খতিব রুহুল আমীন মসজিদ ছেড়ে চলে যান। এমন ঘটনায় অপ্রস্তুত হয়ে যান মসজিদে আসা সাধারণ মুসল্লিরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে মুসল্লিরা আবার মসজিদে ঢোকেন। পরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাচ্ছির আবু ছালেহ পাটোয়ারি নামাজ পড়ান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমীনের অনুসারীদের সঙ্গে কিছু মুসল্লির মারামারির এ ঘটনা ঘটে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে খতিব রুহুল আমীন মসজিদে আসছিলেন না। আপৎকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয় ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ওয়ালিউর রহমানকে। পরে তাঁকে বাদ দিয়ে সুষ্ঠুভাবে জুমার নামাজ পরিচালনার জন্য ৩১ আগস্ট চার সদস্যের একটি ‘ইমাম’ প্যানেল করা হয়। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পর গতকাল খতিব রুহুল আমীন জুমার নামাজ পড়াতে গেলে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও নামাজ পড়াতে মসজিদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি ধর্মসচিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়েছিলেন; কিন্তু তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মহা. বশিরুল আলমের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁদের মুঠোফোনে চেষ্টা করা হয়। তাঁরা ফোন ধরেননি।
এদিকে খতিব রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আমি মসজিদে আমার কক্ষে বসি। এ সময় মুসল্লি কমিটির পরিচয়ে কয়েকজন আমাকে বলেন, আপনি নামাজ পড়াতে যাবেন না। তাঁরা বলতে চান, মুসল্লিরা আমার ওপর অসন্তুষ্ট। তাঁদের মানা ঠেলেই আমি মসজিদে যাই। এ সময় মিম্বারে একজন (আবু ছালেহ) বয়ান করছিলেন। আমি মিম্বারের পাশে নিচেই বসি। মুসল্লিরা যখন দেখলেন খতিব আছেন, তিনি বয়ান করবেন। আমি মাইক্রোফোন নিয়ে বয়ান শুরু করলে তাঁরা বলেন, আপনার পেছনে নামাজ পড়ব না।’
এরপর দুই পক্ষের মধ্যে মসজিদের ভেতরে জুতা, জুতার বাক্স ছোড়াছুড়ি ও হাতিহাতি শুরু হয়। এর কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রুহুল আমীন গোপালগঞ্জের গওহরডাঙা মাদ্রাসার মহাপরিচালক। তাঁর বাবা প্রয়াত শামছুল হক ফরিদপুরী দেশের প্রখ্যাত আলেম। রুহুল আমীন কওমি মাদ্রাসা অঙ্গনে আওয়ামী লীগপন্থী আলেম হিসেবে পরিচিত। তিনি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘শোকরানা মাহফিলে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে এলাকায় পোস্টারও লাগিয়েছিলেন। এসব কারণে তাঁর ওপর মুসল্লিদের একটি অংশ অসন্তুষ্ট ছিল। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, গতকাল মসজিদে মাদ্রাসার কয়েক শ ছাত্র উপস্থিত ছিলেন। এর বেশির ভাই গওহরডাঙা থেকে এসেছিলেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরপরই আবদুল গাফ্ফারকে সভাপতি করে বায়তুল মোকাররম মসজিদের মুসল্লি কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এ কমিটির নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানা গেছে।
(২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত এই সংবাদে ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে কিছু তথ্য সংযোজন করা হয়েছে)