ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছেন র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন হোসেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর লিমন হোসেন এই অভিযোগ দাখিল করেন। পরে তিনি সেখানে (পুরাতন হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে) সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
অভিযোগে যে ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে তারিক আহমেদ সিদ্দিক ছাড়াও আছেন এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক (র্যাবের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিচালক) জিয়াউল আহসান ও র্যাব-৮-এর তৎকালীন ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রাশেদ। এ ছাড়া চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
লিমন হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার শাসনামলে চাইলেও সব অপরাধীকে আসামি করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘সবাইকে আমরা আসামি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অনেক বাধাবিপত্তি ও হুমকি ছিল। যাঁদের আসামি করতে পারিনি তার মধ্যে অন্যতম তারিক আহমেদ সিদ্দিক, র্যাব-৮–এর তৎকালীন ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রাশেদ ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান।’
র্যাবকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে এই বাহিনীর বিলুপ্তি দাবি করেন লিমন হোসেন। দ্রুত বিচারও দাবি করেন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে হবে। তাঁদের আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার করতে হবে।
২০১১ সালে র্যাবের গুলিতে পা হারিয়ে র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করায় ৮-১০ বছর তাঁরা গ্রামের বাড়িতে থাকতে পারেননি বলে জানান লিমন। তিনি বলেন, ‘১৩ বছর অনেক আকুতি-মিনতি করেছি ন্যায়বিচারের জন্য। তখন ন্যায়বিচার তো পাইনি, বরং অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দ্বারস্থ হয়েছি ন্যায়বিচারের পাওয়ার জন্য।’ পায়ের বিনিময়ে কোনো ক্ষতিপূরণ যথোপযুক্ত হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারপরও দেশের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ চান।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের নির্দেশনার কারণে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) তাঁর পুরোপুরি চিকিৎসা হয়নি বলে জানান লিমন। তিনি বলেন, পরে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। আর তাঁর পড়াশোনার সহায়তা করে গণস্বাস্থ্য ও প্রথম আলো।
উল্লেখ্য, ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের লিমন হোসেন ২০১১ সালে ২৩ মার্চ মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে র্যাবের গুলিতে পা হারান। ‘সন্ত্রাসী’ সন্দেহে আটক করার পর তাঁর পায়ে গুলি করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে র্যাব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০১৩ সালে তাঁকে দুটি মামলা থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ওই ঘটনার সময় লিমনের বয়স ছিল ১৬ বছর। তাঁকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে বাঁ পা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত থেকে কেটে ফেলেন।
তবে দমে যাননি লিমন হোসেন। আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষে এখন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি।