ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ফটক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ফটক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনেক সংযোগের বিল পায় না, তাই সূর্য সেন হলে ওয়াই–ফাই দেওয়া হচ্ছে না

তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস চলার মধ্যে মাস্টারদা সূর্য সেন হলে সাড়ে তিন সপ্তাহ ধরে ওয়াই–ফাই ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এতে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। অভিযোগ রয়েছে, এ কাণ্ডের নেপথ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ কিছু শিক্ষার্থীর বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়া ও আর্থিক লেনদেন।

সূর্য সেন হলে ওয়াই–ফাই ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ৪ এপ্রিল থেকে। চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ২২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শতভাগ ক্লাস অনলাইনে নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে মুঠোফোনে ইন্টারনেট কিনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

সূর্য সেন হলের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, হলে ওয়াই–ফাই ইন্টারনেট সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে চলতি মাসের বিল নিয়েছে। কিন্তু ৪ এপ্রিল থেকে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে তারা। অনলাইনে ক্লাস শুরু হওয়ার পর মুঠোফোনে প্যাকেজ কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে।

সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক ও সূর্য সেন হল শাখার সাবেক নেতা আরিফুল ইসলাম এবং বহিরাগত সাব্বির আহমেদের সঙ্গে কথা বলে কয়েক মাস আগে ওয়াই–ফাই ইন্টারনেট সরবরাহকারী ওই প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা। এ সময় অর্থের লেনদেন হয়েছিল বলে আলোচনা রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ছাত্রলীগের নেতাদের বেশ কিছু কক্ষে বিনা মূল্যে সংযোগও দিতে হয়েছিল।

মাজহারুল কবিরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, সূর্য সেন হলের ২০০টি কক্ষে ওয়াই–ফাই সংযোগ আছে। এর মধ্যে বিল পাওয়া যায় ৫০-৬০টির। বাকিরা বিনা মূল্যে সেবা নেন। এমন পরিস্থিতিতে সেবা দিতে না পেরে ওই প্রতিষ্ঠান সূর্য সেন হল থেকে চলে গেছে। ঠিকমতো বিল পাওয়া যায় না বলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও সূর্য সেন হলে আসতে চাইছে না।

বিনা মূল্যে সংযোগ ও অর্থ লেনদেনের বিষয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এসব থেকে সব সময় দূরে থাকার চেষ্টা করি। টাকা ছাড়া সংযোগ বেশির ভাগই রয়েছে অরাজনৈতিক ছাত্রদের কক্ষগুলোতে। হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা কথাবার্তা বলছেন। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে হলের ইন্টারনেট সংযোগের বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে কথা বলতে মাজহারুলের ঘনিষ্ঠ বহিরাগত (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র) সাব্বির আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে বন্ধ পাওয়া যায়।

ইন্টারনেট সংযোগেরের বিষয়ে সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ জাকির হোসেন ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, হল প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে একটি সভা করেছে। হল প্রশাসন সাধারণত ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করে না বা এর সঙ্গে যুক্ত হয় না। এ ধরনের কোনো নিয়মও নেই। ছাত্ররা নিজেদের মতো করেই ব্যবস্থা করে। ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যাটা তারাই সমাধান করবে। একজন আবাসিক শিক্ষককে এর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে। তিনি বিষয়টি দেখভাল করবেন।