ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজ থেকে একটি পোস্ট করেছেন, ‘টিকটক কথা শুনতে শুরু করেছে।’ পোস্টের সঙ্গে মন্ত্রী একটি স্ক্রিনশটও দিয়েছেন। যাতে দেখা যায়, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে টিকটক বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ লাখ ভিডিও সরিয়েছে।
মন্ত্রীর পোস্টের সূত্র ধরেই দেখা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক ‘কমিউনিটি গাইডলাইন এনফোর্সমেন্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ভিডিও সরানো হয়েছে ৪৯ লাখ ৭৪ হাজার ৮৩৮টি। এর মধ্যে স্ব–উদ্যোগী হয়ে টিকটক ৯৯ দশমিক ২ শতাংশ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৯৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং কোনো ভিউ হওয়ার আগেই সরানো হয়েছে ৯৬ দশমিক ৩ শতাংশ ভিডিও।
এর আগের বছরের প্রথম প্রান্তিক জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬টি ভিডিও সরিয়ে নিয়েছিল টিকটক। ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার শীর্ষ ৩০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া।
প্রতিবেদনে জানা যায়, এ বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত টিকটক মোট ভিডিও সরিয়েছে ১১ কোটি ৩৮ লাখ ৯ হাজার ৩০০টি। এতে স্ব–উদ্যোগী হয়ে ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ, কোনো ভিউ হওয়ার আগেই ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮৩ দশমিক ৯ শতাংশ ভিডিও সরানো হয়েছে।
এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি প্রতিবেদনে বলেছে, কমিউনিটি গাইডলাইন, পরিষেবার শর্ত লঙ্ঘন করে এমন কনটেন্ট এবং অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে টিকটক নিয়মিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ ছাড়া ব্যবহারকারীদের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তারা এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে।
টিকটক আত্মহত্যা, নিজের ক্ষতি ও বিপজ্জনক ভিডিও ৬ দশমিক ১ শতাংশ, হয়রানি ও বুলিংয়ের কারণে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, উগ্র ও গ্রাফিক কনটেন্ট ৯ দশমিক ৩ শতাংশ, নগ্নতা ও যৌনতা–সম্পর্কিত কনটেন্ট ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে ২১ দশমিক ২ শতাংশ এবং সংখ্যালঘু বিবেচনায় ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ কনটেন্ট সরিয়েছে টিকটক।
এ ছাড়া ভুয়া অ্যাকাউন্ট সরিয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৩২ হাজার ৫৮টি, ১৩ বছর বয়সের নিচে সন্দেহ হওয়ায় অ্যাকাউন্ট সরিয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬টি এবং অন্যান্য কনটেন্ট সরিয়েছে ৫২ লাখ ২২ হাজার ৯৬৮টি।
টিকটক ব্যবহার করে মানুষ যেন নিজেদের প্রকাশ করতে পারে এবং বিনোদন পায় সে লক্ষ্যেই তারা কাজ করে বলে জানায়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে সরকার কোনো কনটেন্টের বিষয়ে আপত্তি করলে তারা তা সরিয়ে নেবে বা নিষেধাজ্ঞা দেবে। সে ক্ষেত্রে সঠিক উপায়ে ও আইনগতভাবে কোনো অনুরোধ করা হলে তাকে সম্মান করে টিকটক। তবে প্রতিটি অনুরোধকেই তারা পর্যালোচনা (রিভিউ) করে এবং নিজেদের কমিউনিটি গাইডলাইন অনুযায়ী বিবেচনা করে।
এ বছরের মে মাসে টিকটকের প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে জানা যায়, টিকটক গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ৫টি অনুরোধ পেয়েছিল, যার মধ্যে ১৬টি অ্যাকাউন্ট ছিল। যার মধ্যে ছয়টি অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় টিকটকের গাইডলাইন ভঙ্গের অভিযোগে। এ ছাড়া বাকি ১০টি অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার হার ৩৮ শতাংশ।
গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকেও টিকটকের কাছে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোট অনুরোধ ১৩টি, আইনি প্রক্রিয়ায় অনুরোধ ৮টি, জরুরি অনুরোধ ৫টি, মোট নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে অনুরোধ ১৮টি, কনটেন্ট কোথা থেকে তৈরি হয়েছে, সে সম্পর্কিত তথ্য চাওয়ার অনুরোধ ছিল ১৩ শতাংশ এবং কনটেন্ট কোথা থেকে তৈরি হয়েছে, তা জরুরি ভিত্তিতে জানানোর অনুরোধের পরিমাণ ছিল ৪০ শতাংশ।
টিকটক বলেছে, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনুরোধে সাড়া দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও অধিকারকে সম্মান করেই তারা কোনো অনুরোধে সাড়া দেয়। প্রতিটি অনুরোধের ক্ষেত্রে নিজেদের কমিউনিটি গাইডলাইন নীতি পর্যালোচনা করা হয়।