জীবজগৎকে বিজ্ঞানীরা এভাবেও ভাগ করেন যে যারা গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে আর যারা নিজেদের মধ্যে একটা শারীরিকভাবে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখে। মানুষ দূরত্ব বজায় রাখা প্রাণী। ফলে অনেক মানুষ এক জায়গায় আসার একটা মাহাত্ম্য আছে। বইমেলার ভিড় এই দূরত্ব রাখার অভ্যাস দূরে ঠেলে দেয়।
বইমেলায় সারা মাসের ভিড়ের কতগুলো আলাদা চরিত্র আছে। শুক্র-শনির সারা দিনের ভিড়, এদিন শিশুদের। আছে বসন্ত আর একুশের ভিড়, আবার মেলার শেষ সপ্তাহের ভিড়। ঢাকার যোগাযোগে একটা বড় সংযোজন ঘটেছে। ফলে ভিড়ের চরিত্র পাল্টেছে। মেলায় আসা জনসমাগমের দিকে তাকালে সেটা লক্ষ করা যায়। অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে মোবাইল ফোন হাতে তরুণ। তাঁরা ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, হয়তো রিল বানাবেন। সেই হিসেবে বইয়ের স্টলগুলোর সামনে ভিড় কম।
তরুণ নন-ফিকশন লেখকদের সঙ্গে গত কয়েক দিনে কথা হয়েছে। তাঁদের বইয়ের বিষয় বেশ কৌতূহলোদ্দীপক।
প্রিন্টার্স লাইন থেকে প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে হুমায়ূন শফিকের। নাম চোখ বিতরণ কর্মসূচি। তিনি বললেন, পথ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন নতুন লেখকদের নিজেদের পাঠকমহল সচেতনভাবে তৈরি করে নিতে হয়। ছাপতে না হলে প্রকাশের জন্য কারও মুখাপেক্ষী থাকতে হয় না। অন্তর্জালের জগৎ থেকে পাঠক খুঁজে নেওয়া যায়।
তরুণ নন-ফিকশন লেখকদের সঙ্গে গত কয়েক দিনে কথা হয়েছে। তাঁদের বইয়ের বিষয় বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। ইতিহাস ও দর্শন পাঠের ক্ষেত্রে তাঁরা অচর্চিত পথে হাঁটছেন বলে ভাবার অবকাশ আছে। পুলিন বকসীর রুমি এবং নারী অথবা আরিফ রহমানের বিদ্রোহী পুরাণ বইগুলোর লেখকের সঙ্গে কথা হয়েছিল। প্রচলিত ভাবনার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চাইছেন এই তরুণ লেখকেরা।
এখন মেলায় যাঁদের সামনে ভিড় বেশি দেখা গেল, তাঁরা অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘সেলিব্রিটি’। লেখকদের সামনে ভিড়ের দিন কি শেষ হয়ে আসছে? গ্রন্থিক প্রকাশনের তানিয়ার সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, তাঁদের যে পরিমাণ বিক্রি, এর একটা বড় অংশ এখন অনলাইন বই সরবরাহকারীদের মাধ্যমে হয়। একজন লেখক একাই প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠছেন এমন আর তেমন কাউকে চোখে পড়ে না এখন।
অনলাইনের ভিড় এখন বই ছাপার জগতে বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। দশক আগের যে ভিড় লেখকদের ঘিরে জমে উঠত, এখন তা ফেসবুক সেলিব্রিটিদের চারপাশে জমে ওঠে। মেলা যখন শুধু বাংলা একাডেমিতে হতো তখন একবার হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে এমন ভিড় হয়েছিল যে কর্তৃপক্ষ তাঁকে মেলায় আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছিল। সে ব্যাপার নিয়ে জাতীয় সংসদেও কথা উঠেছিল। সময় বদলেছে। লিখে বিখ্যাত হওয়ার জায়গায় বিখ্যাতরা এখন লিখছেন। এই ভিড় মোবাইল স্ক্রিনের স্ক্রল করে যাওয়ার মতোই দ্রুত দৃষ্টির আড়ালে চলে যায় কি না, তা-ও নজর করে দেখার ব্যাপার।
যত মানুষ মেলা প্রাঙ্গণে আসেন, তাঁদের সামান্য অংশও যদি বই খরিদ করতেন তাহলে…এমন কথা প্রকাশকদের মুখে হরহামেশা শোনা যায়। তবে এই জনসমাগমের আগমনের হেতুবিচার গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রণেশ দাশগুপ্ত পরিচয় পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘গত চব্বিশ বছরে যেসব রাজনৈতিক নিবন্ধ রচনা এবং সাহিত্যচর্চা ও সৃষ্টি হয়েছে, তার হিসাব-নিকাশ করলেও মুক্তিসংগ্রামের চেতনার উপাদানগুলির সাক্ষাৎ পাওয়া যেতে পারে।’ বইমেলার ভিড় এই জায়গা থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন কী পড়ছি, কোন লেখকদের পড়ছি, তা জানা যাবে এই ভিড় থেকে। এই ভিড়কে ভালোমতো হিসাব-নিকাশ করলে বাংলাদেশ কোথায় যাবে, তা বোঝা যাবে।
এই সংকলনে বাংলাদেশের বিভিন্ন দশকের ২৫ জন নারীর গল্প রয়েছে। বিগত প্রায় ছয়-সাত দশকে এই অঞ্চলের নারীর সামাজিক-অর্থনৈতিক- সাংস্কৃতিক এবং সর্বোপরি মনোজগতের রূপান্তর কীভাবে ঘটল, তার একটি চিত্র পাওয়া যায় এতে। একই সঙ্গে লৈঙ্গিকচেতনায় বিভাজিত সমাজের বাস্তব চেহারার ছবি ফুটে উঠছে এখানে। গল্পগুলো যে কোনো নির্দিষ্ট তত্ত্বের ছকে ফেলা যাবে, তা নয়। তবে প্রতিটি লেখাই নারীর দৈনন্দিন জীবনের বেদনা-বঞ্চনায় ভরা। সম্পাদক আফসানা বেগম কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৫। এটি তাঁর সম্পাদিত প্রথম বই।
ঘরে বসে বইমেলার যেকোনো বই পেতে: ০১৭৩০০০০৬১৯