আইন–অধিকার

ভাইয়েরা মা–বাবার সম্পত্তি বোনদের না দিলে করণীয়

সালেহার (ছদ্মনাম) মা মারা গেছেন কয়েক মাস হয়েছে। বাবা মারা গেছেন প্রায় তিন বছর আগে। মা–বাবা জীবিত থাকতেই সালেহার বিয়ে হয়েছে। তার বড় দুই ভাই এবং ছোট এক ভাই আছে। সালেহার বাবা এবং মায়ের সম্পত্তি একেবারে কম না; বসতভিটা, কৃষিজমি, পুকুর রয়েছে গ্রামে, শহরেও একটা বাড়ি আছে। অনেক দিন ধরে ভাইয়েরাই এসব সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছে। মা মারা যাওয়ার পর সব সম্পত্তি ভাইয়েরা নিজেদের মতো করে ভাগ করে নিয়েছে। বোনকে কোনো সম্পত্তির ভাগ দেয়নি। সালেহা ভাইদের কাছে সম্পত্তির ভাগ দাবি করলে তারা কোনো সদুত্তর দেয় না। তারা সম্পত্তির বদলে কিছু টাকাপয়সা নেওয়ার কথা বলে, কিন্তু সালেহা এতে রাজি না। প্রাপ্য অনুযায়ী সম্পত্তির ভাগ চান তিনি।

অলংকরণ: তুলি

এ রকম ঘটনা আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বোনদের সম্পত্তির অংশ দিতে যেন ভাইদের একটু অনীহা থাকে। বাবা বা মায়ের সম্পত্তি শুধু ছেলেরা নিজেরাই ভোগ করবে, বোনদের দেবে না, এটা আইনসম্মত নয়। বাবা বা মায়ের রেখে যায় সম্পত্তিতে ছেলে এবং মেয়ের উভয়ের অধিকার রয়েছে। উভয়েই এ সম্পত্তির প্রাপ্য হবেন। কোনো অবস্থাতেই ভাইয়েরা বাবা বা মায়ের সম্পত্তি থেকে বোনদের বঞ্চিত করতে পারে না। অনেকে অজ্ঞতার কারণে, আবার অনেককে ভাইদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা হবে ভেবে প্রাপ্য অংশটুকু ছেড়ে দিতে দেখা যায়। কিন্তু বোনদের সম্পত্তির অংশ না দিলে তারা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে।

মুসলিম পারিবারিক আইনে বোনদের সম্পত্তির অংশ

মুসলিম পারিবারিক আইনে বাবা বা মা মারা গেলে মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই থাকে, তাহলে রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে প্রত্যেক ছেলে যা পাবে, মেয়ে তার অর্ধেক পাবে। অর্থাৎ বাবা বা মায়ের সম্পত্তি ২:১ অনুপাতে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ভাগ হবে। ভাইয়েরা ইচ্ছা করলেই বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে বোনের বিয়ে হোক বা না হোক, সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। অনেকেই মনে করেন, যেহেতু বোনেরা অন্যের সংসারে চলে গেছে তাই মা–বাবার সম্পত্তিতে তাদের আবার কিসের ভাগ! এটা মোটেও ঠিক নয়।

আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি

বাবা বা মা মারা গেলে কিংবা উভয়ে মারা গেলে প্রথমে মা–বাবার সম্পত্তি কি আছে তার একটি তালিকা করে নেওয়া উচিত। ভাইদের উচিত বোনদের ডেকে এনে প্রাপ্য সম্পত্তি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। ভাইবোনেরা আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে আপস করে বণ্টননামা সম্পন্ন করে নিতে পারে। এই বণ্টননামা রেজিস্ট্রি করে নিতে হবে। এ বণ্টননামা দাখিল করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড অফিস থেকে নামজারি করে নিতে হবে।

সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হলে

যদি আপসের মাধ্যমে ভাইয়েরা বোনদের সম্পত্তি দিতে না চায় কিংবা বোনদের সম্পত্তি কম দিতে চায়, তাহলে বোনেরা দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বঞ্চিত বোনেরা বাঁটোয়ারা বা বণ্টনের মোকাদ্দমা করতে পারে। কোনো যৌথ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলেও কে কতটুকু অংশ পাবে, তা আদালতের মাধ্যমে নির্ধারণের জন্য বাঁটোয়ারা মামলা করতে হয়। সাধারণত বিরোধ দেখা দেওয়ার ছয় বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং অংশ চাইতে পারে,Ñঅর্থাৎ শুধু বোনেরা নয় বোনেরা মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারীরাও এই মামলায় পক্ষ হতে পারে। এ মামলায় দুইবার ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রি হওয়ার পর বা আগে নির্ধারিত সময়ে নিজেদের আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার সুযোগ আছে।

তানজিম আল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী