আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন অন্তত ১৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে আজ রোববার এসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে নির্বাচনী দৌড়ে রয়ে গেছেন।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রিসভায় ২৩ মন্ত্রী, ১৮ প্রতিমন্ত্রী ও ৩ উপমন্ত্রী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩ জন বাদে সবাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। যে তিনজন মনোনয়ন পাননি, তাঁরা হলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। অন্য মন্ত্রীদের আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও সেগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম হবে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, এসব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর বিপরীতে যাঁরা স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন, তাঁদের কেউ সাবেক সংসদ সদস্য, কেউ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন। আবার অনেকেই দলের স্থানীয় পর্যায়ে পদধারী নেতা। এসব আসনে মন্ত্রীদের নিজ দলের শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে।
গাজীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, রেজাউল করিমের পেছনে আছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি চাঁদপুর-৩ আসনের (সদর ও হাইমচর) বর্তমান সংসদ সদস্য। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শামছুল হক ভুইয়া। তাঁর পক্ষে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের একাংশ। আরেকাংশ দীপু মনির পক্ষে।
পিরোজপুর-১ আসনে (সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরখানি) আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আবদুল আউয়াল। এই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতে ইতিমধ্যে একজন মারা গেছেন।
নরসিংদী-৪ আসনে (বেলাব- মনোহরদী) আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোহরদী উপজেলা পরিষদের পাঁচবারের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান। প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি সম্প্রতি চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন।
লালমনিরহাট-২ আসনে (আদিতমারী ও কালিগঞ্জ) সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল হক। মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে এলাকায় আলোচনা আছে। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীও আছেন।
নওগাঁ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান।
নেত্রকোনা-২ আসনে (নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টা উপজেলা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সঙ্গে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী ফুটবলার আরিফ খান জয়। আরিফ খান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন।
রাজশাহী-৬ আসনে (চারঘাট ও বাঘা উপজেলা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য রাহেনুল হক। নাটোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিংড়া উপজেলা পরিষদের সম্প্রতি পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে (চুনারুঘাট ও মাদবপুর) আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক।
ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং (মুরাদ)। গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম। জামালপুর-২ আসনে (ইসলামপুর উপজেলা) আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা জিয়াউল হক ও সাজাহান আলী মণ্ডল।
মেহেরপুর-১ আসনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীনকে।
শরীয়তপুর-২ আসনে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খালেদ শওকত আলী। তিনি সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ছেলে।
এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় আওয়ামী লীগ। ফলে স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগের অনেক নেতা–কর্মী প্রকাশ্যেই অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।