শত্রুভূমি থেকে সম্মুখসমরে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে লেখক কর্নেল (অব.) বজলুল গনি পাটোয়ারীর (বই হাতে) সঙ্গে (বাঁ থেকে) তাঁর জামাতা এ এন এম মাহফুজ, মেয়ে সাজিয়া গনি, স্ত্রী নায়লা পারভীন, ছেলে শায়ান গনি ও বড় ভাই আবদুর রাজ্জাক পাটোয়ারী। আজ শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে
শত্রুভূমি থেকে সম্মুখসমরে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে লেখক কর্নেল (অব.) বজলুল গনি পাটোয়ারীর (বই হাতে) সঙ্গে (বাঁ থেকে) তাঁর জামাতা এ এন এম মাহফুজ, মেয়ে সাজিয়া গনি, স্ত্রী নায়লা পারভীন, ছেলে শায়ান গনি ও বড় ভাই আবদুর রাজ্জাক পাটোয়ারী। আজ শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে

মোড়ক উন্মোচন

পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে, দুঃসাহসিক কাহিনির নতুন বই

তৎকালীন মেজর মঞ্জুর, তাহের, জিয়াউদ্দিন ও ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে।

তাঁরা চারজন—তৎকালীন মেজর মঞ্জুর, মেজর তাহের, মেজর জিয়াউদ্দিন ও ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাটোয়ারী। তাঁরা পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানের কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে ভারতে প্রবেশ ও পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সেই দুঃসাহসিক কাহিনি নিয়ে প্রকাশিত হলো বজলুল গনি পাটোয়ারীর লেখা বই শত্রুভূমি থেকে সম্মুখসমরে।

রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে আজ শনিবার বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়। বইটিতে বর্ণনা করা হয়েছে কীভাবে তৎকালীন মেজর মঞ্জুর, মেজর তাহের, মেজর জিয়াউদ্দিন ও ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাটোয়ারী এবং মঞ্জুরের স্ত্রী, শিশুপুত্র, কন্যা ও এক বাঙালি সৈনিক ঝড়বৃষ্টির রাতে কখনো হেঁটে, কখনো হামাগুড়ি দিয়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে কাশ্মীর সীমান্ত পাড়ি দেন।

মুক্তিযুদ্ধে কর্নেল (অব.) বজলুল গনি পাটোয়ারী প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেলটা (ডি) কোম্পানির রণক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন। এটি ‘সিনিয়র টাইগার্স’ নামে বেশি পরিচিত। তিনি যুদ্ধ করেছেন সিলেট সীমান্তে। মুক্তিযুদ্ধের পর তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বইয়ের লেখক বজলুল গনি চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতাহীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। বাংলাদেশের মানুষ জেগেছে, জাতি জেগেছে। জাতিকে জাগিয়ে রাখতে হবে। নতুন প্রজন্মকে অভিবাদন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্ম জাতীয়তাবোধকে জাগিয়ে তুলেছে।

বজলুল গনি পাটোয়ারী যে তিনজনের সঙ্গে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের দুজন পরে বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হন। একজন মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুর, অন্যজন কর্নেল আবু তাহের। তাঁরা দুজন প্রয়াত। অন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল পদ থেকে অবসরে যাওয়া জিয়াউদ্দিন অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শত্রুভূমি থেকে সম্মুখসমরে বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। এটি সম্পাদনা করেছেন মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ। তিনি অনুষ্ঠানে বলেন, সম্মুখসমরে যাঁরা যুদ্ধ করেছেন, গুলি করেছেন, মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে এসেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখা হয়েছে খুব কম। সেদিক দিয়ে এই বই একটি নতুন সংযোজন।

বইটি প্রকাশের পেছনের কথাও তুলে ধরেন নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, বজলুল গনি পাটোয়ারীর কাছে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি পুরোনো লেখা ছিল। সেটি থেকে বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ২০০৯ সালে প্রথমা প্রকাশন যাত্রা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৮৯০টি বই প্রকাশ করেছে। প্রথমা প্রকাশনের বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি মুক্তিযুদ্ধ। প্রথমা থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫৪। তিনি বলেন, চারজন মুক্তিযোদ্ধার পাকিস্তান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসার দুঃসাহসিক যাত্রার কথা ভাবা যায় না। যেকোনো সময় তাঁদের মৃত্যু হতে পারত। সম্মুখসমরে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বইয়ের সংখ্যা আসলেই কম।

মতিউর রহমান আরও বলেন, মেজর মঞ্জুরের ওপর একটি বই প্রথমা প্রকাশ করেছে। আরেকটি প্রকাশিত হবে। কর্নেল তাহেরের পাকিস্তান থেকে ফেরার অভিজ্ঞতা বিচিত্রার ১৯৭২ সালের বিজয় দিবস সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। সেটি এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বজলুল গনি পাটোয়ারীর স্ত্রী নায়লা পারভীন, মেয়ে সাজিয়া গনি, ছেলে শায়ান গনি, জামাতা এ এন এম মাহফুজ, বড় ভাই আবদুর রাজ্জাক পাটোয়ারী এবং অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও প্রথমা প্রকাশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।