দেশে ইন্টারনেট দামে কম মানে খারাপ

প্রতীকী ছবি রয়টার্স

মাসে দেড় হাজার টাকার ব্রডব্যান্ড প্যাকেজ ব্যবহার করেন কম্পিউটার প্রকৌশলী ইয়াসিন আরাফাত।  ভারত, মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করলে বাংলাদেশের গতি ভালো না বলে জানালেন তিনি। আরও বললেন, অপারেটররা শুরুর দিকে মান ভালো রাখলেও পরের দিকে তা বজায় রাখে না। এ ছাড়া প্রচুর শেয়ারড নেটওয়ার্কের কারণেও গতি কমে যায়।

মোবাইল ইন্টারনেটের বিষয়ে এই গ্রাহক বলেন, গতি নির্ভর করে এলাকার ওপর। শহরে থাকলে ভালোই পাওয়া যায় কিন্তু মফস্বলে বা একটু গ্রামের দিকে গেলে মোবাইল ইন্টারনেটের অবস্থা খুব খারাপ থাকে।

ইয়াসিন আরাফাতের মতো দেশে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শহরাঞ্চলের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও দিন দিন ইন্টারনেটের সঙ্গে অভ্যস্ত হচ্ছে। গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর তথ্য অনুযায়ী দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক হচ্ছে ১১ কোটি ৬৪ লাখ এবং ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী সংখ্যা ১ কোটি ১১ লাখ।  

ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট দুটি ক্ষেত্রেই গতিতে পিছিয়ে দেশ

ইন্টারনেটের দাম ও গতি নিয়ে পর্যালোচনাকারী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান কেবলডটকোডটইউকে এর পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু মানের কথা বিবেচনা করলে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো তলানিতেই পড়ে আছে।

কেবলডটকোডটইউকে সেপ্টেম্বরে বিশ্বের মোবাইল ডেটার দাম সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতে ২৩৩টি দেশের ৫ হাজার মোবাইল ডেটা প্ল্যানের ১ জিবি খরচের তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে।

কেবলডটকোডটইউকের তালিকায় মোবাইল ইন্টারনেটের কম দামের দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। এটি গতবার ছিল ৮ম অবস্থানে। বাংলাদেশে গড়ে ১ জিবি ডেটার দাম শূন্য দশমিক ৩২ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় গড়ে ১ জিবির জন্য খরচ হয় ৩০ টাকা ৪১ পয়সা। যদিও গত বছর এ দাম ছিল শূন্য দশমিক ৩৪ ডলার তথা ৩২ দশমিক ৩১ টাকা।

মোবাইল ইন্টারনেটের দাম সবচেয়ে সস্তা ইসরায়েলে বলছে কেবলডটইউকে। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে কম দামে মোবাইল ইন্টারনেট পাওয়া যায় ভারতে (শূন্য দশমিক ১৭ ডলার), নেপালে ও শ্রীলঙ্কায় (শূন্য দশমিক ২৭ ডলার)।

কেবলডটইউকে ২২০টি দেশের বৈশ্বিক ব্রডব্যান্ডের তুলনামূলক দামও পর্যালোচনা করেছে। তাদের তালিকায় ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের জন্য মাসে গড়ে ১৭ দশমিক ৪০ ডলার অর্থাৎ দেড় হাজারের কিছু বেশি টাকা খরচ করতে হয়। এ ছাড়া বলা হয়, বাংলাদেশে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা খরচ করলে ব্রডব্যান্ড সেবা পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে ব্রডব্যান্ডের দাম কম নেপাল (১১ দশমিক ৭০ ডলার), শ্রীলঙ্কা (১৪ দশমিক ৯৯ ডলার) ও ভারতে (১৫ দশমিক ৫৯ ডলার)।

দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মান কেমন

কেবলডটইউকে বলছে, ব্রডব্যান্ডে দামের দিক থেকে কিছুটা সস্তা থাকলেও গতির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে। তালিকায় ২২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৫তম। বাংলাদেশের গড় ডাউনলোড গতি ৩ দশমিক ৭৪ এমবিপিএস। এখানে ৫ জিবির একটি সিনেমা নামাতে ৩ ঘণ্টা ২ মিনিট ৩২ সেকেন্ড সময় লাগে। ব্রডব্যান্ডে গতির দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থান ৭৭তম, মালদ্বীপ ১২৭তম, শ্রীলঙ্কা ১২৯তম, নেপাল ১৩৯ তম এবং ভুটান ১৪৩ তম। এর মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে ইন্টারনেটের দাম বাংলাদেশের চেয়ে কম।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতির মান খারাপ হওয়া প্রসঙ্গে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামেগঞ্জে অবৈধ আইএসপিদের (ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) কোনো জবাবদিহি নেই এবং তারা গুণমান নিশ্চিত করে না। এ জন্য গতির সার্বিক চিত্রেই তার প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া এ বছরের শুরুর দিকে দেশের সাবমেরিন কেবল থেকে পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইথ পেতে কিছু সমস্যা হওয়ায় গতি কিছুটা কম ছিল বলে জানান।

মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কেমন

মোবাইল ইন্টারনেটের গতির দিক থেকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে। ইন্টারনেটের গতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা প্রতিষ্ঠান ওকলার জুলাই মাসের তথ্য বলছে, ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০ তম। ওকলার হিসেবে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি ৯ দশমিক ৬৪ এমবিপিএস। আপলোডের গতি ৭ দশমিক ৭৫ এমবিপিএস। এক বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩১ তম।