ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান বলেন, বিশ্বের দেশগুলো এই বিশ্ব সংস্থার মানবাধিকার রক্ষার মতো বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু অনেক দেশের সরকার এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে চায় না।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে ‘মানবাধিকারকর্মীদের রক্ষা করা: মানবাধিকারকর্মীদের জন্য নিরাপদ বিশ্বের সমাধান’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় এ কথা বলেন হুমা খান। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৪’ (বঙ্গোপসাগরীয় সংলাপ) নামের এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
মানবাধিকারকর্মীদের নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন হুমা খান। বলেন, গুম হয়ে যাওয়া, জেল খাটা, অপরাধীর তকমা পাওয়া, অনলাইনে হয়রানির শিকার হওয়ার মতো নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যান মানবাধিকারকর্মীরা। এর সবকিছুই বিগত সময়ে বাংলাদেশে ঘটেছে। এখন সরকার পরিবর্তন হয়েছে। অল্প সময় পার হয়েছে। পরিবর্তন দেখার আশা করছেন তিনি।
হুমা খান বলেন, মানবাধিকার একটি রাজনৈতিক ধারণা। এটা আইনি বা কারিগরি ইস্যু নয়। দেখতে হবে, সরকার এটাকে কীভাবে দেখে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করে।
বিভিন্ন দেশে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন হুমা খান। একই সঙ্গে মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, দেশগুলো জাতিসংঘের পদ্ধতিকে গ্রহণ করে। তা বাস্তবায়নের কাজও তাদের। আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলো সহায়তা করে থাকে। এই সংস্থাগুলোর বিচার করার ক্ষমতা নেই। এটা করার ক্ষমতা শুধু সরকারের, যদি না সেটা আন্তর্জাতিক আদালতে নেওয়া হয়। যদিও সেখানে যেতে হলে অনেক কিছু পূরণ করে যেতে হয়।
ভারতের মান্ত্রা ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা সান্থিয়ে ম্যারিয়েট ডি’সুজা মানবাধিকারের জন্য স্থানীয় পর্যায়ের সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে এর চর্চায় গুরুত্ব দিতে হবে।
সান্থিয়ে ম্যারিয়েট ডি’সুজা বলেন, গণতন্ত্র থাকা মানেই তা নিঁখুত নয়। বিশেষ করে এশিয়াতে। মানবাধিকারের জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন প্রয়োজন। মানুষ কীভাবে এটাকে দেখতে চায়, কীভাবে গ্রহণ করতে চায়, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।
চাকমা সার্কেল প্রধানের উপদেষ্টা রানী ইয়ান ইয়ান বলেন, আদিবাসী মানবাধিকারকর্মীদের নিয়ে গণমাধ্যমেও সন্ত্রাসী, বন্য, অসভ্য, তারা আলাদা হতে চায়—এমন বয়ান তৈরি করা হয়। এভাবে অনবরত প্রচার করতে থাকলে তখন মানবাধিকারকর্মীর কিছু হলে পাশে দাঁড়ানোর কেউ থাকে না। নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলে যেতেই হবে। নিজেদের আওয়াজ তুলতে হবে।
সিজিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী আপন জহির এই প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন।