দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্লট চেয়েছেন ১০ সংসদ সদস্য। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে তাঁদের প্লট দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তাঁদের কেউ ৫ কাঠা, কেউবা ১০ কাঠা আয়তনের প্লট চেয়েছেন। যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
তবে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলে বিষয়টি রাজউকের বোর্ড সভায় উঠবে।
এই সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি একজন সচিব, একজন উপাচার্য এবং প্রায় দুই ডজন বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি–বেসরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী রাজউকের প্লট পেতে আবেদন করেছেন।
বিধি মোতাবেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও জনসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্লট দেওয়ার কথা। তবে শর্ত পূরণ না করেও দলীয় আনুগত্য ও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট পাওয়ার নজির আছে।
ঢাকায় বাড়ি, প্লট ও ফ্ল্যাট আছে, এমন সংসদ সদস্যও বিশেষ কোটায় রাজউকের প্লট পেয়েছেন। যদিও রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে তাঁরা কেবল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসরণ করেছেন।
গত আগস্টেই ১৮ সচিবকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে রাজউক সংরক্ষিত কোটায় বিভিন্ন আয়তনের প্লট পেয়েছেন অন্তত ২৮৫ জন।
তাঁদের মধ্যে ১৪৯ জনই সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য। বাকিদের মধ্যে আছেন উচ্চপর্যায়ের আমলা থেকে শুরু করে অফিস সহকারী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীও আছেন।
নতুন করে প্লট পেতে যাওয়া সংসদ সদস্যদের তালিকায় আছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার। তিনি একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী। পূর্বাচল প্রকল্পে পাঁচ কাঠা আয়তনের প্লট চেয়েছেন শাহীন আক্তার। ৩০ অক্টোবর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমেদ পাঁচ কাঠা আয়তনের প্লট চেয়েছেন। নেছার আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ মাসে আগে তিনি প্লটের জন্য আবেদন করেন। তবে এখন পর্যন্ত প্লট পাওয়ার খবর পাননি। তিনি বলেন, এবার প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে সরকারি কোনো প্লট পাননি তিনি।
প্লটের জন্য আবেদন করেছেন বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ বছরের শুরুতে তিনি প্লটের জন্য আবেদন করেছেন, তবে এখনো পাননি। প্লটের জন্য কোনো ধরনের তদবির করেননি বলছেন তিনি।
ঢাকা–৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম, বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, নরসিংদী-১ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ডরথী রহমান প্লটের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে হাবিবুর রহমান পূর্বাচলে ১০ কাঠা আয়তনের প্লট চেয়েছেন।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহান প্লট চেয়ে আবেদন করেছেন। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর। তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয়ী হন মেরিন জাহান।
রাজউকের বিধিমালার ১৩(এ) ধারা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে অবদান, জনসেবা ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে সংরক্ষিত কোটায় প্লট দেওয়া হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, প্লট পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে প্রস্তাবটি রাজউকের বোর্ড সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। বোর্ড সভায় প্লট বরাদ্দ চূড়ান্ত হয়।
নরসিংদী-১ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। প্লট পাওয়ার যোগ্যতা রাখি। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে দুবার সংসদ সদস্য হয়েছি। তখন আবেদন করিনি। এক বছর আগে প্লটের জন্য আবেদন করেছি। নিয়মের মধ্যে হলে পাব।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে প্লট পেতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন দুই ডজনের মতো সরকারি–বেসরকারি কর্মকর্তা। রাজউকের আওতাধীন বিভিন্ন আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন তাঁরা।
তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দিন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন আক্তার প্রমুখ।
জানতে চাইলে অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক বন্ধুর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্লটের জন্য এ মাসের শুরুতে আবেদন করা হয়। আমার বাবা একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। সে হিসেবে আমি প্লট পেতে পারি। তা ছাড়া প্রশাসনের কর্মকর্তারাও প্লট পাচ্ছেন। এসব বিবেচনায় প্লটের জন্য আবেদন করেছি। তবে আবেদনটি কোন অবস্থানে আছে, জানি না।’
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, সংসদ সদস্য, সচিব, উপাচার্যসহ সরকারি কর্মকর্তাদের প্লটের আবেদন প্রস্তাব গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে রাজউকের বোর্ড সভায় পাঠানো হবে। নির্বাচনের আগেই বোর্ড সভায় প্রস্তাবগুলো উঠবে। তবে সব প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।
গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্লট পেতে নতুন করে এমপিদের কিছু প্রস্তাব এসেছে। পূর্বাচলে তেমন প্লট নেই। তবে তাঁদের প্রস্তাব আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেটা বাস্তবায়ন করব।’ অন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।