বাংলাদেশের একজন বড় ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে এক বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন কি না, সেটি তদন্ত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক।
আজ সোমবার রাতে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, ‘এত বড় একটা ঘটনায়...যেখানে তথ্যপ্রমাণসহ আমরা পড়েছি, যেগুলো অবিশ্বাস করাটাও সমস্যা। বিষয়টি গুরুতর, রাষ্ট্রের জন্য। প্রধানমন্ত্রী, আপনি অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিন, বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখার জন্য, আসলে কোনো বাংলাদেশি গিয়ে ওখানে (সিঙ্গাপুরে) এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন কি না। করলে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে কীভাবে টাকাটা পেলেন, না হয় কোন সোর্স (উৎস) থেকে আনলেন। বাংলাদেশ থেকে না আনলে কীভাবে আসল।’
মুজিবুল হকের বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদের অধিবেশন কক্ষে ছিলেন। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওই সময় অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না। উল্লেখ্য, জরুরি কোনো ঘটনায় স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেন সংসদ সদস্যরা।
এক বিলিয়ন ডলার পাচারের বিষয়টি নিয়ে ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখ করে মুজিবুল হক বলেন, বাংলাদেশের এ অবস্থার মধ্যে এক ব্যক্তির নাম আসছে, যিনি বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়ী, কয়েকটা ব্যাংকের মালিক, তাঁর সম্পর্কে আসছে...তিনি অন্য একটি দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে সিঙ্গাপুরে মার্কেট করেছেন, হোটেল করেছেন এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে।
গত ৪ আগস্ট ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এ ‘এস আলমস আলাদিনস ল্যাম্প’ (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (প্রায় ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বিশাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের নাম সে তালিকায় নেই।
ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি কমার্শিয়াল স্পেস (বাণিজ্যিক পরিসর) এবং অন্য যেসব সম্পদ কিনেছেন, সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তাঁর নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ৬ আগস্ট নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম দম্পতির করা আবেদনের (লিভ টু আপিল) শুনানি নিয়ে ২৩ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি অভিযোগ অনুসন্ধান-সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর ওপর সব পক্ষকে আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন।
এ প্রসঙ্গে সংসদে মুজিবুল হক বলেন, ‘এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ এসেছে। এটা সত্য কি না, জানি না, সত্য হয়ে থাকলে এটা রাষ্ট্রবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। হাইকোর্টও দুর্নীতি দমন কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে আবার অপিল বিভাগের আদেশে স্থগিত আছে।’
মুজিবুল হক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে চলছে না। ডলারের সংকট, ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। রিজার্ভে সমস্যা। রেমিট্যান্স কমে আসছে। পত্রপত্রিকায় দেখা যায়, টাকা পাচার হচ্ছে।
বিরোধী দলের এই সংসদ সদস্য বলেন, একজন কৃষক ঋণ নিলে পরিশোধ না করলে পরোয়ানা হয়। কৃষকের সুদ মাফ করার জন্য সুপারিশ করা হলেও সেটা গ্রহণ করা হয় না। কিন্তু নাসা গ্রুপের ঋণে ২৫২ কোটি টাকার সুদ মাফ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পর্যবেক্ষকের আপত্তি সত্ত্বেও সেটা মাফ করা হয়েছে।
কোন ব্যাংক থেকে এই গ্রুপ ঋণ নিয়েছে, সেটি উল্লেখ না করে মুজিবুল হক বলেন, ‘এই ব্যাংক সম্পর্কে আরও অনেক প্রশ্ন আছে। যেহেতু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, তারা কী করছে, সেটা আমরা জানতে চাই।’
পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থমন্ত্রীকে বারবার বলেছি, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে, ব্যবস্থা নিন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী...মানুষ, কথাই বলেন না। অর্থ পাচার নিয়ে সংসদে বিবৃতি দেন না। সাংবাদিকদের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানান না। সে দেশ কীভাবে চলবে, জানি না।’