সংসদ সদস্যদের যাঁর যাঁর এলাকার হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই অনুরোধ জানান। এর আগে মন্ত্রী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে রোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন। সকালে প্রস্তাবিত ১৫০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্ধারিত গোয়াছি বাগানের স্থানটি পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।
মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী বলেন, ‘আমি মাননীয় সংসদ সদস্যদের প্রায়ই অনুরোধ করি, আপনারা একটু আপনাদের হাসপাতালগুলোতে যান। হাসপাতালে গিয়ে নিজেদের চেকআপ করান। তাহলে হাসপাতালের মান অনেক বাড়বে। দেশের চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। গতকাল একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়েছি। ক্লিনিক চলবে কিন্তু ইমার্জেন্সিতে একটা ডাক্তার থাকবে না, একটা অক্সিজেনের সিলিন্ডার থাকবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
হাসপাতালের পরিচালক ও অধ্যক্ষকে উদ্দেশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একটি অনুরোধ করব, আপনারা আমাকে একটি তালিকা করে দেন; কোন কাজটা আগে করতে হবে, কোনটা পরে। ইউরোলজি ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীর চাপ দেখেছি। কক্সবাজার, রাঙামাটি, নোয়াখালী থেকে রোগী এখানে আসছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে প্রায়ই আমাকে আবেদন দেওয়া হয়, বিশেষ করে গাইনি বিভাগ থেকে। প্রায় চিকিৎসক ঢাকা চলে যেতে চায়। গাইনি বিভাগ থেকে যদি সবাই চলে যেতে চায়, তাহলে চলবে কীভাবে?’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করেন, তাহলে হাসপাতালের সব সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা আমার থাকবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান নষ্ট, এটা শুনতে আমার কাছে খারাপ লাগে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করার জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার আমি করব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি, মেডিকেল কলেজগুলোতে, একটি সরকারি হাসপাতালে বিকেল পাঁচটায় গিয়ে কাউকে পাইনি। আমার কাছে এ রকম প্রমাণ আছে। অনুরোধ করছি, আপনারা আমাকে সার্ভিস দেন। আপনাদের জন্য যা দরকার করব। আপনাদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে সভা করেছি। সংসদে এটি নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি। চিকিৎসকদের সুরক্ষা, চিকিৎসকদের মানসম্মান এটা আমার কাছে সবার আগে।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘একজন চিকিৎসকের জন্য আমি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে চাই। নারী ডাক্তারদের রাতে দায়িত্ব পালন করার সময় যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, তার আমি জন্য কাজ করছি।’
বার্ন ইউনিট সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করতে চায় চীন। আমরাও চাই একই সময়ে সবকিছু দিয়ে ইউনিটটি চালু করতে। ওই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করে আসার পর এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এই বার্ন ইউনিট চালু হলে চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা উপকৃত হবে। সবাইকে ঢাকায় ছুটতে হবে না।’
সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন, কলেজের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার, জেলা সিভিল সার্জন ইলিয়াস চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে গ্রামপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার মান দেখতে তিনি হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া নগরের গোলপাহাড় মোড়ের মেট্রো ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।