জন্মের এক বছরের মধ্যে শিশুর জন্মনিবন্ধন করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছরের প্রথম ৮ মাসে এক বছর বয়সী মাত্র ৪৫ শতাংশ শিশুর জন্মনিবন্ধন হয়েছে। নিবন্ধন বাড়াতে হাসপাতালগুলোয় নিবন্ধক রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার (৬ অক্টোবর) জাতীয় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ বিষয়গুলো উঠে আসে। রাজধানীর কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন। এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘জন্ম–মৃত্যুনিবন্ধন, আনবে দেশে সুশাসন’।
আলোচনা সভায় বলা হয়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর জন্য সিআরভিএস (সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস) দশক (২০১৫-২০২৪) ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ সালের মধ্যে জন্মের এক বছরের মধ্যে শতভাগ জন্মনিবন্ধন ও ৫০ শতাংশ মৃত্যুনিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে জন্মনিবন্ধন শতভাগ এবং মৃত্যুনিবন্ধন ৮০ শতাংশ করতে হবে। এই লক্ষ্য এখনো পূরণ হয়নি।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ২০২৪ ও ২০৩০ সালের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সঠিকভাবে নিবন্ধন করতে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। নিবন্ধনের সুফল সম্পর্কে মানুষকে জানানো প্রয়োজন। নিবন্ধন বাড়াতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা যায়। এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত জন্মের এক বছরের মধ্যে ৪৫ শতাংশ শিশুর জন্মনিবন্ধন হয়েছে। মৃত্যুনিবন্ধনও হয়েছে ৪৫ শতাংশ। বিলম্বিত নিবন্ধনের হার বেশি। দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে জন্মের এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। বিলম্বিত জন্মনিবন্ধন হয়েছে ৬০ শতাংশ। মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন হয়েছে ২১ শতাংশ এবং বিলম্বিত নিবন্ধন হয়েছে ৭৯ শতাংশ। জন্মের এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন বাড়াতে হাসপাতালে নিবন্ধক রাখার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
সভায় আরেক বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কাজে ব্যয়ের তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল। এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে নিবন্ধনকাজকে গতিশীল করা দরকার। নিবন্ধন বাড়াতে শিশুর টিকা দেওয়ার আগে জন্মনিবন্ধন করার শর্ত জুড়ে তা কার্যকর করার আহ্বান জানান তিনি।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের প্রতিনিধি দীপিকা শর্মা বলেন, শিশুর নাগরিক সেবা পাওয়ার পুরো প্রক্রিয়ায় প্রবেশের মৌলিক ভিত্তি হলো জন্মনিবন্ধন। এটা নাগরিকত্বের আইনগত প্রমাণ। বাংলাদেশে মোট ৫৬ শতাংশ শিশুর জন্মনিবন্ধন হয়েছে। জন্মসনদ না হওয়া শিশু পাচার ও বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে পড়ে। কোনো আইনি প্রক্রিয়ায়ও ওই শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। তাই শিশুর সুরক্ষার জন্য জন্মনিবন্ধন জরুরি।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন উপরেজিস্ট্রার জেনারেল আবু নছর মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ৫ হাজার ২৪৬টি নিবন্ধন কার্যালয়ের ১০ হাজার ৪৯২ জন নিবন্ধক ও নিবন্ধন সহকারীর মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সেবা নির্বিঘ্ন করার জন্য ২৫০ টেরাবাইট অতিরিক্ত স্টোরেজ কিনে সিস্টেমে যুক্ত করা হয়েছে। নথি আপলোড স্থান ১০ গুণ বাড়িয়ে ২ মেগাবাইট করা হয়েছে। দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি হলেও জন্মনিবন্ধনের সংখ্যা ২৩ কোটি। দ্বৈত জন্মনিবন্ধন বাতিলে নতুন প্রকল্প নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সভাপতির বক্তব্যে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন বলেন, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার জন্য একটি শুদ্ধ নিবন্ধন সনদ দিতে সহায়তা করছে এ কার্যালয়। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৮ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি জন্মনিবন্ধন এবং ৫ লাখ ৫১ হাজারের বেশি মৃত্যুনিবন্ধন হয়েছে। সুশাসন নিশ্চিত করতে জন্মসনদের মাধ্যমে নাগরিক সেবা পাওয়ায় সহায়তা করা হচ্ছে। কমিউনিটি পর্যায়ে কাজে গতি আনার জন্য টাস্কফোর্স কমিটিকে সক্রিয় করা হয়েছে। তিনি মাঠপর্যায়ে নিবন্ধনের কাজ করা ব্যক্তিদের ভাতার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন।