যক্ষ্মা এখনো বিশ্বের অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। উপসর্গহীন যক্ষ্মা নতুন সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। একে মোকাবিলার জন্য যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে নতুন করে সাজাতে হবে।
যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনের প্ল্যানারি অধিবেশনে এ কথা বলা হয়। আজ শনিবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে পাঁচ দিনের এই সম্মেলন শেষ হচ্ছে। বিশ্বের ১৫৭টি দেশের চার হাজারের বেশি প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দেন। বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ জন প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
শেষ দিনের প্ল্যানারি অধিবেশনে এসিমটোমেটিক টিবি বা উপসর্গহীন যক্ষ্মা, এই যক্ষ্মা সংজ্ঞা, এর প্রকোপ ও করণীয় নির্ধারণে আলোচনা হয়। অধিবেশনের শুরুতে নেদারল্যান্ডসের যক্ষ্মা রোগতত্ত্ববিদ ফ্রাঙ্কো কোবেলেনস এশিয়া ও আফ্রিকার ২৬টি দেশের সাত লাখের বেশি মানুষের ওপর করা জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেন, যক্ষ্মায় যত মানুষ আক্রান্ত হয়, উপসর্গহীন যক্ষ্মায় প্রায় তত মানুষ আক্রান্ত হয়। আলোচনায় বলা হয়, উপসর্গহীন যক্ষ্মার অর্থ এমন নয় যে তার কোনো উপসর্গ থাকবে না। এর অর্থ হলো এতকাল ধরে জানা উপসর্গগুলো থাকবে না। এর মধ্যে আছে দুই সপ্তাহর বেশি কাশি, জ্বর, রাতে ঘেমে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা।
ফ্রাঙ্কো কোবেলেনস বলেন, যক্ষ্মা শনাক্তের সনাতন পরীক্ষাপদ্ধতিতে উপসর্গহীন যক্ষ্মা ধরা পড়ে না। ফুসফুসের যক্ষ্মা শনাক্তের সময় অবশ্যই উপসর্গহীন যক্ষ্মার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
উপসর্গহীন যক্ষ্মার সংজ্ঞা নিয়ে গত অক্টোবরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বিশেষজ্ঞরা সভা করেছে বলে জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যক্ষ্মা বিভাগের প্রধান ডেনিস কারজোল। ওই সভায় সংজ্ঞা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা একমত যে ল্যাটেন্ট টিবি বা সুপ্ত যক্ষ্মা এবং উপসর্গহীন যক্ষ্মা এক বিষয় নয়। ডেনিস কারজোল বলেন, যক্ষ্মা সার্ভিল্যান্স, যক্ষ্মা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, যক্ষ্মা শনাক্ত, চিকিৎসা সবকিছুতেই উপসর্গহীন যক্ষ্মাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
পাঁচ দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যক্ষ্মার সঙ্গে সম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে ১৫০টির বেশি অধিবেশন হয়েছে। এসব অধিবেশনে দুই হাজারের বেশি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
ডায়াবেটিসের রোগীর যক্ষ্মা হলে অথবা যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তির অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে কী হয় বা কী করণীয়, তা নিয়ে আজ সকালে একটি অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। এতে পেরু, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশের গবেষকেরা বক্তব্য দেন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী তাসমিয়া ইব্রাহিম বলেন, আইসিডিডিআরবির ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চার বছর পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাতে তিনি দেখেছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যক্ষ্মায় দ্বিতীয়বার বেশি আক্রান্ত হন।