স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হককে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ছয় কারা কর্মকর্তার পদোন্নতিসংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আগামী ৪ ডিসেম্বর তাঁদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালত অবমাননার অভিযোগে করা পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা পৃথক পাঁচটি আবেদন শুনানির জন্য আগামী ৪ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন আদালত।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, পদোন্নতি নিয়ে ছয় কারা কর্মকর্তার (জেল সুপার) করা পুনর্বিবেচনার আবেদনের (রিভিউ) ওপর গত বছরের ২২ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন। রায়ে ১৯৮৪ সালের অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফ (ডিপার্টমেন্ট অফ প্রিজন্স) রিক্রুটমেন্ট বিধিমালার আলোকে দ্রুত আবেদনকারীদের (ছয় জেল সুপার, চলতি দায়িত্ব) পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে পদোন্নতিপ্রত্যাশী মো. নুরুন্নবী ভূঁইয়াসহ পাঁচ কর্মকর্তা গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর পৃথক পাঁচটি আবেদন করেন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল। কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সফিকুল ইসলাম।
আবেদনকারীদের আইনজীবীর তথ্যমতে, ছয় কর্মকর্তা ২০০৮ সালে জেল সুপারের চলতি দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৮৪ সালের নিয়োগবিধি অনুসারে পূর্ণ নিয়োগ পেতে তথা পদোন্নতির জন্য ২০১৬ সালে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বিফল হন। এ নিয়ে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে তাঁদের পক্ষে রায় পান। এর বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল ট্রাইব্যুনালে গেলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। এর বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল বিভাগে আপিল করেন, যা ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল খারিজ হয়। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ছয় কর্মকর্তা ২০১৯ সালে ছয়টি আবেদন (রিভিউ) করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ গত বছরের ২২ এপ্রিল ওই রায় দেন।
আবেদনকারীদের আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, আদালত অবমাননার আবেদনগুলো ৬ নভেম্বর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। ছয়জনকে পদোন্নতি দিতে রিভিউয়ের রায় বাস্তবায়নের জন্য দুই সপ্তাহ সময় নেন কারা কর্তৃপক্ষের আইনজীবী। তবে আজ শুনানিতে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির ১৬ নভেম্বরের এক সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন কারা কর্তৃপক্ষের আইনজীবী। ছয় কর্মকর্তাকে ১৯৮৪ সালের নিয়োগবিধির আওতায় এ পর্যায়ে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার সুযোগ নেই বলে ওই সভায় সিদ্ধান্তে এসেছে।
আইনজীবী ইব্রাহীম খলিল আরও বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ বলে মন্তব্য করেন আপিল বিভাগ। ছয় কর্মকর্তার পদোন্নতির রায় কেন বাস্তবায়িত হয়নি, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হককে ৪ ডিসেম্বর সকাল নয়টায় সশরীর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।