তদন্তের প্রয়োজনে সাকিব, হিরো আলমকে জেরা করা হতে পারে: ডিবি  

‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম ‘আরাভ খান’। তবে এটা তাঁর আসল নাম নয়। তিনি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ছেলে রবিউল ইসলাম। চার বছর আগে ঢাকায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি

সাকিব আল হাসান ও হিরো আলম

পুলিশ কর্মকর্তা খুনের দায়ে অভিযুক্ত পলাতক আসামির স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে দুবাই যাওয়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও ইউটিউবার হিরো আলমকে তদন্তের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশির স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ও চলচ্চিত্র তারকাদের আমন্ত্রণ নিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনা চলছে। ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম ‘আরাভ খান’। তবে এটা তাঁর আসল নাম নয়। তিনি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ছেলে রবিউল ইসলাম। চার বছর আগে ঢাকায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমাদের একজন মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তার লাশ যাতে না পাওয়া যায়, সে জন্য খুনিরা লাশ জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসে। মামলাটি তদন্ত করে ডিবি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। ‘আরাভ খান’ নামধারী রবিউল একজন খুনি। এসব কথা সাকিব আল হাসানদের অবগত করার পরও তাঁরা ‘আরাভ’ নামের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন, সেটা দুঃখজনক। তদন্তের স্বার্থে যদি প্রয়োজন মনে করি, তাহলে সাকিব, হিরো আলমদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।’

এ বিষয়ে সাকিব আল হাসানের বক্তব্য জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হয়। তবে তিনি জবাব দেননি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, রবিউল ওরফে আরাভের নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুনের দায়ে তাকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সাকিব আল হাসান দুবাইয়ে স্বর্ণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কি না, আমরা তথ্য নিচ্ছি। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব।’

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৮ সালে পুলিশের পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে ভারতে চলে যান সে সময় ৩০ বছর বয়সী রবিউল ইসলাম। সেখানে বিয়ে করেন। পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। সেই পাসপোর্ট দিয়েই পাড়ি জমান দুবাইয়ে। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী।

‘আরাভ খান’ নামধারী রবিউল একজন খুনি। এসব কথা সাকিব আল হাসানদের অবগত করার পরও তাঁরা ‘আরাভ’ নামের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন, সেটা দুঃখজনক। তদন্তের স্বার্থে যদি প্রয়োজন মনে করি, তাহলে সাকিব, হিরো আলমদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা), ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)

কয়েক দিন আগে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্যাতিমান তারকাদের সম্ভাব্য উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন রবিউল ওরফে আরাভ। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের মালিকও তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল ও বাগানসহ বড় ডুপ্লেক্স বাড়িও। যেখানে মাঝেমধ্যে মায়াবী হরিণ জবাই দিয়ে বাংলাদেশিদের দাওয়াত খাওয়াচ্ছেন। বাগানে চাষ করছেন বাংলাদেশি সবজি। রয়েছে একাধিক দামি গাড়ি। আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন উপলক্ষে ৬০ কেজি সোনা দিয়ে বানানো হয়েছে বাজপাখির আদলে লোগো, যা তৈরিতে সময় লেগেছে প্রায় আড়াই মাস। এটা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।