এনআইডি সার্ভারের নিরাপত্তা

চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখার সুপারিশ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার নিয়মিত নিরীক্ষা, কারিগরি নিরাপত্তা আরও জোরদার এবং যেসব চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সার্ভার (তথ্যভান্ডার) থেকে সেবা নেয়, তাদের সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ, ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস বা বিকল্প জায়গায় তথ্য সংরক্ষণ) চালু করাসহ নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যভান্ডারের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তির অধ্যাপক ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে ১৭১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এনআইডির তথ্যভান্ডারে প্রায় ১২ কোটি ভোটারের কমবেশি ৩০ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য আছে। ১৭১টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইসির এই তথ্যভান্ডার থেকে প্রতিনিয়ত তথ্য যাচাই-সংক্রান্ত সেবা নিচ্ছে। ইসির কাছ থেকে এই সেবা নেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে সম্প্রতি লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। এরপর দেশে ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থানায় নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল ওই সভার আয়োজন করে ইসি।

বৈঠক শেষে এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং টেকনিক্যাল পারসনদের (কারিগরি বিশেষজ্ঞ) সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেছেন। তাঁদের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য ১৭১টি পার্টনারের (সেবা নেওয়া প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে তাঁরা কথা বলবেন। তখন আরও বেশিসংখ্যক কারিগরি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

এনআইডি সার্ভার থেকে তথ্য ফাঁস হয়নি, জানিয়ে হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো লুপহোলস (ফাঁকফোকর) এখন পর্যন্ত নেই। তবে আমাদের সিস্টেমকে (ব্যবস্থা) আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে। আমরা যাতে পিরিওডিক্যাল অডিট (নির্দিষ্ট সময় পর নিরীক্ষা) করতে পারি, টেকনিক্যাল কমিটি মাঝেমধে৵ বসে দেখতে পারে কোনো থ্রেট (ঝুঁকি) আছে কি না। আমাদের পার্টনারগুলোকে (সেবা গ্রহীতা) মনিটর (পর্যবেক্ষণ) করতে পারি, সে বিষয়ে তাঁরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন।’

এনাআইডির মহাপরিচালক বলেন, বৈঠকে প্রযুক্তিবিদেরা তাঁদের ডিআরএসের কথা বলেছেন। গত বুধবার বিডিসিসিএলের (বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড) সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। আগামী মাস থেকে এনআইডির তথ্যগুলো গাজীপুরের কালিয়াকৈরে (হাইটেক পার্কে) বিকল্প হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। প্রতিথযশা ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কারিগরি কমিটি হঠন করা হবে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে হুমায়ূন কবীর বলেন, গাজীপুরে যে বিকল্প সংরক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে সেটি অ্যাকটিভ ডিআরএস (একই সঙ্গে দুটি সার্ভারই চালু থাকা) হবে না। এটা হবে ব্যাকআপ (বিকল্প সংরক্ষণ)। সামনে অ্যাকটিভ ডিআরএস করা হবে।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তির সময় তাদের কোনো দুর্বলতা আছে কি না, তা কি খতিয়ে দেখা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, ‘যখন চুক্তি হয়, তখন আমরা সিকিউরিটির বিষয়টি দেখে নিই। তাঁরা আইসিটি থেকে একটি সনদপত্র নিয়ে আসেন। এখন আমরা ম্যান্ডেটরি (বাধ্যতামূলক) করব চুক্তির আগে আইসিটি থেকে সনদ নিয়ে আসেন। কিন্তু চুক্তির পরে আমাদের পিরিওয়ডিক্যাল অডিট বৃদ্ধি করতে হবে। তাঁদের সঙ্গে আমাদের বসার তাগিদ দিয়েছেন প্রযুক্তিবিদেরা।’

বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, আহ্‌ছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‍্যাবের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ ও টাইগার আইটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।