দুই রঙিন মসলিন শাড়িতে আঁকা তরুণী আর বৃদ্ধার মুখাবয়ব
দুই রঙিন মসলিন শাড়িতে আঁকা তরুণী আর বৃদ্ধার মুখাবয়ব

বুড়িগঙ্গার সাতকাহন নিয়ে চলছে প্রদর্শনী ‘গঙ্গাবুড়ি’

দুই রঙিন মসলিনে আঁকা তরুণী আর বৃদ্ধার মুখাবয়ব। তাদের চারপাশে বদলে গেছে প্রাণিজগৎ আর পানির রং। ‘শীতলক্ষ্যার সাতকাহন’ নামের এ ছবি এঁকেছেন শিল্পী অনন্যা মেহপার আজাদ। ধারাবাহিক স্কেচ আর কথোপকথন দিয়ে বুড়িগঙ্গার পাড়ের কয়েকটি চরিত্র তুলে ধরেছেন শিল্পী শামীম আহমেদ। ইট দিয়ে দম আটকে যাওয়া বুড়িগঙ্গা নদী বানিয়েছেন শিল্পী মো. খাইরুল আলম। তাঁরাসহ সাতজন শিল্পীর ব্যতিক্রমী শিল্পকর্ম নিয়ে চলছে প্রদর্শনী ‘গঙ্গাবুড়ি’।

রাজধানীর হাজারীবাগে বৃহত্ত্ব আর্ট ফাউন্ডেশনের গ্যালারিতে চলছে এই প্রদর্শনী। এখানে স্থান পেয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ, দখলে ছোট হয়ে আসা নদী, পিরানহা মাছের আধিপত্য আর নদীর জীববৈচিত্র্য বদলে যাওয়ার বাস্তবতার কথা। শিল্পীরা সেই নির্মম সত্য তুলে ধরেছেন ফ্লো অব ড্রিমস, মেটামরফেসিস, মেমোরিজ অব ওয়াটার বা ইটাগঙ্গা নামের শিল্পকর্মের ভেতর দিয়ে। এর সঙ্গে উঠে এসেছে নদী কেন্দ্র করে মানুষের লোকবিশ্বাস, প্রচলিত মানত-রীতি, বিভিন্ন জীবিকার মানুষের অনেক রকম গল্প।

শীতলক্ষ্যায় রাক্ষুসে স্বভাবের পিরানহা মাছের রাজত্ব। এরা অন্য মাছ ও জলজ প্রাণীদের খেয়ে ফেলে। দেশীয় প্রজাতির মাছ, তথা জীববৈচিত্র্যের জন্য এগুলো হুমকিস্বরূপ

কখনো আহমেদ রাসেলের তোলা স্থিরচিত্র, কখনো স্থপতি সাইদুল করিমের বানানো ‘কাউরা’ বুননের ঝুড়ি ও নদীর ঢেউ দর্শককে বারবার মুখোমুখি করছে আরেক বুড়িগঙ্গা নদীর সামনে।

শীতলক্ষ্যার সাতকাহন শিল্পকর্মে বুড়িগঙ্গা নদীর দুই সময়কে উপস্থাপন করেছেন শিল্পী অনন্যা। তিনি ব্রহ্মপুত্র ও পরশুরামের পৌরাণিক গল্পকে বুড়িগঙ্গার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।  

শামীম আহমেদ চৌধুরীর গল্প বলার ভেতর দিয়ে জায়গা পেয়েছে বুড়িগঙ্গার নদীর দিক থেকে প্রকৃতি অনুভবের কথা। তাই তিনি বেছে নিয়েছেন নদীর বুকে শীত, রোদ, পানি এবং কুয়াশার মতো প্রসঙ্গগুলো।

গঙ্গাবুড়ি প্রদর্শনীর মধ্যে চলছে কর্মশালা। সেখানে এসে শিশুরা শিখছে ছবি দিয়ে গল্প বলার কৌশল।

শামীম আহমেদ চৌধুরীর গল্প বলার ভেতর দিয়ে জায়গা পেয়েছে বুড়িগঙ্গার নদীর দিক থেকে প্রকৃতি অনুভবের কথা

আয়োজকেরা বললেন, দেশের সভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে নদীর অবদান মনে করিয়ে দেওয়া এবং পরিবেশগত সচেতনতা তৈরি তাঁদের উদ্দেশ্য। শিল্পের মধ্য দিয়ে  দূষিত পরিবেশকে কীভাবে অনুপ্রেরণা ও পুনর্জীবনের ধারায় রূপান্তরিত করা যায়, তা এই প্রদর্শনীতে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানালেন শিল্পীরা। তাঁরা বললেন, মূলত নদীকে উপজীব্য করে গড়ে ওঠা আখ্যানকে জীবন্ত ও নিরাপদ রাখার বিষয়টি মাথায় রেখেই এ প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর কিউরেটর শেহজাদ চৌধুরী।

‘গঙ্গাবুড়ি’ প্রদর্শনীটি আয়োজনের সহযোগী হিসেবে রয়েছে ইউরোপিয়ান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কালচার (ইইউএনআইসি) বাংলাদেশ। একই সঙ্গে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ, গ্যেটে-ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, ইইউ ডেলিগেশন ইন বাংলাদেশ, বাংলাদেশে অবস্থিত নেদারল্যান্ডস ও স্পেনের দূতাবাস রয়েছে প্রদর্শনীর সঙ্গে।

৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনী ‘গঙ্গাবুড়ি’ চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার বাদে প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।